রমজান মাসে ওমরাহ পালন

হজের পাঁচ দিন (৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ ) ছাড়া সারা বছর ৩৬০ দিন ওমরাহ করা যায়। দৈহিক, আর্থিক সামর্থ্যবান ও আল্লাহ যাঁকে কবুল করেছেন তিনি হজ ও ওমরাহ পালন করেন। ওমরাহে যাঁরা যাচ্ছেন আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করুন ‘হে আল্লাহ আমার ওমরাহকে সহজ কর কবুল কর।’ দেখবেন সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। রমজান মাস ফজিলতের মাস । রমজান মাসে আমল করলে অন্যান্য মাসের তুলনায় ৭০ গুণ বা তার চেয়েও বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। মক্কায় মসজিদুল হারামে (কাবা শরিফে) এক রাকাত নামাজ আদায় করলে এক লাখ রাকাতের চেয়েও বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। একই সঙ্গে মদিনার মসজিদে নববীতে এক রাকাত নামাজ আদায় করলে বহুগুণ সওয়াব পাওয়া যায়। রমজানে মক্কা বা মদিনায় অবস্থান করে যত খুশি নফল তাওয়াফ করতে পারেন। একই সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, চাশত, তারাবি, তাহাজ্জুদ নামাজসহ অন্যান্য আমল করে অনেক বেশি সওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়।

 রমজান মাসে ১৫ দিন মক্কা-মদিনায় অবস্থান করলেও অনেক আমল করা যায়। যাঁরা এবার ওমরাহ বা  হজ পালন করবেন, তাঁরা হজ ও ওমরাহর নিয়মকানুন বিস্তারিত জানতে দেখতে পারেন www.prothomalo.com/hajj ওয়েবসাইটে। কাবা শরিফে অবস্থান করে রমজান মাসের আমলগুলো করতে পারেন। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো ।

সিয়াম পালন করা: রমজান মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ। আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য রমাদানে সিয়াম পালন করলে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ হয়।

সময়মতো সালাত আদায় করা: সিয়াম পালনের সঙ্গে সময়মতো নামাজ আদায় করা। ওমরাহ পালন করার সুবাদে মক্কায় পবিত্র কাবা শরিফে বা মদিনার মসজিদে নববীতে অবস্থান করে বিশাল জামাতে সময়মতো নামাজ পড়তে পারবেন। 

কোরআন তিলাওয়াত করা, সঠিকভাবে শেখা, অপরকে শেখানো: ওমরাহ পালন করার সুবাদে মক্কায় পবিত্র কাবা শরিফে বা মদিনার মসজিদে নববীতে অবস্থান করে কোরআন তিলাওয়াত করা, সহিহভাবে শেখা, অপরকে শেখানো যায়।

সাহ্‌রি খাওয়া: সাহ্‌রি খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে এবং সিয়াম পালনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

তারাবিহর নামাজ পড়া: তারাবিহর নামাজ পড়া এ মাসের অন্যতম আমল। মক্কার মসজিদুল হারামে বা মসজিদে নববীতে ইমামের সুললিত কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াত শুনবেন ও তারাবিহর নামাজ আদায় করবেন, অন্য রকম অনুভূতি হবে। যা বলে বোঝানো যাবে না।

আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা: রমজান মাস পাওয়া এক বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। সে জন্য আল্লাহ তাআলার বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা।

সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়া: রমজান মাস ছাড়াও সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়ার মধ্যে বিরাট সওয়াব এবং মর্যাদা রয়েছে। রমজানের কারণে আরও বেশি ফজিলত রয়েছে। যেহেতু সাহ্‌রি খাওয়ার জন্য উঠতে হয়, সে জন্য রমজান মাসে সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করার বিশেষ সুযোগও রয়েছে।

বেশি বেশি দান-সদকাহ করা: এ মাসে বেশি বেশি দান-সদকাহ করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। গরিব মিসকিনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। হিসাব করে এ মাসে জাকাত দেওয়া উত্তম।

ইতিকাফ করা: ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা। অর্থাৎ মানুষদের থেকে পৃথক হয়ে সালাত, সিয়াম, কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া, ইস্তিগফার ও অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য লাভের জন্য একাকী কিছু সময় যাপন করা। ওমরাহ পালন করার সুবাদে মক্কায় পবিত্র কাবা শরিফে বা মদিনার মসজিদে নববীতে ইতিকাফ করতে পারবেন।

বেশি বেশি দোয়া ও  কান্নাকাটি করা: দোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রমজান মাসে আল্লাহর নিকট বেশি বেশি কান্নাকাটি করতে হবে।

ইফতার করা: ইফতার করা, অপরকে ইফতার করানো বিরাট সওয়াবের কাজ। মক্কা–মদিনায় অবস্থান করলেই দেখবেন ওখানকার মানুষ রোজাদারকে ইফতার করানোর জন্য রাস্তায় মসজিদে ইফতারি নিয়ে অপেক্ষা করেন। খুব কাছ থেকে তাঁদের আতিথেয়তা দেখতে পাবেন।

তওবা ও ইস্তিগফার করা: তওবা শব্দের আভিধানিক অর্থ ফিরে আসা, গুনাহের কাজ আর না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া। আর তওবা করলে আল্লাহ খুশি হন। এ মাসে বেশি বেশি আল্লাহর জিকির বা স্মরণ করা ও তাসবিহ পাঠ করতে হবে। মক্কা–মদিনায় অবস্থান করলে তওবা ও ইস্তিগফার করার সুযোগও পাবেন।

তাকওয়া অর্জন করা: তাকওয়া এমন একটি গুণ, যা বান্দাকে আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপকাজ থেকে বিরত রাখে এবং তাঁর আদেশ মানতে বাধ্য করে।

অতএব, আমাদের সবার কর্তব্য হবে এত সব ফজিলত লাভের জন্য সচেষ্ট হওয়া। যার ওপর ফরজ হয়েছে তিনি কালবিলম্ব না করে রমজানে ওমরাহ এবং হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিন। কারণ, আমরা কেউ জানি না আমার মৃত্যু কখন এসে পড়ে।

ফেরদৌস ফয়সাল সাংবাদিক