ফেরি বিকলে দুর্ভোগ

ভোলার ভেদুরিয়া-বরিশালের লাহারহাট নৌপথ একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। এই নৌপথ দিয়ে বরিশাল, খুলনা বিভাগসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১৬টি জেলার মানুষ যাতায়াত করে। নৌপথটি বরিশাল-ভোলা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অংশ হওয়ায় এ পথে ব্যবসায়িক পণ্য বহন করা হয় বেশি। কিন্তু এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথের তিনটি ফেরির মধ্যে একটি ফেরি ছয় দিন ধরে বিকল হয়ে যদি পড়ে থাকে তাহলে কী অবস্থা হতে পারে, তা কি অনুমান করতে পারেন? হ্যাঁ, ঠিক এমনটাই ঘটেছে সেখানে।

 বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত ২৪ মে ভেদুরিয়া- লাহারহাট নৌপথের একটি ফেরিতে যান্ত্রিক ক্রটি দেখা দিলে তা বিকল হয়ে পড়ে। পরে মেরামতের জন্য এটিকে চাঁদপুর ডকে পাঠানো হয়। এদিকে একটি ফেরি কম থাকার কারণে পারাপার চলছে ধীরগতিতে। এতে ঘাটের দুই পারে দুই শতাধিক পণ্যবাহী যানবাহন আটকে পড়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন চালক ও ব্যবসায়ীরা। কোনো কোনো যানবাহন দু-তিন দিন ধরে আটকে রয়েছে। এসব যানবাহনে ধান, চাল, পোনা, আম, লিচু, শসা, শুঁটকি, বিস্কুট, কাঠ, রড, সিমেন্ট, গ্যাস, গরু, কাঁচামালসহ পচনশীল নানা পণ্য। এসব পণ্য গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ী পচে যাওয়ার ভয়ে বিভিন্ন ফল ও সবজি লঞ্চে করে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কা করছেন।

এই প্রথমবার নয়, এই নৌপথে আগেও বেশ কয়েকবার ফেরি নষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তখন প্রয়োজনের চেয়ে কম ফেরি দিয়ে যান পারাপার করায় স্বাভাবিকভাবেই দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। শুধু ভেদুরিয়া-লাহারহাট নৌপথে নয়, দেশের প্রায় সব নৌপথেই এমনটা ঘটে চলেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে এ রকম কি চলতেই থাকবে? এর কি কোনো স্থায়ী সমাধান নেই? এমনিতেই দেশজুড়ে বিভিন্ন নৌপথে প্রয়োজনের তুলনায় ফেরির সংখ্যা খুব কম। তার ওপর যেসব ফেরি চলছে, তার বেশির ভাগ চলছে জোড়াতালি দিয়ে। কোনো কোনোটির ইঞ্জিন অনেক পুরোনো, মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। কোনো কোনোটির অবকাঠামো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। দেখা যায়, কোনো ফেরি বিকল হলে তা মেরামত করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পর আবার নষ্ট হয়। এভাবে বারবার মেরামতে প্রচুর টাকা গচ্চা যায়, অথচ লাভ হয় না কিছুই। এগুলো ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন
পক্ষের (বিআইডব্লিউটিসি)। তারা যে তাদের দায়িত্ব পালন করছে না, তা তো বোঝাই যাচ্ছে।

আসলে মূল সমস্যা হচ্ছে জবাবদিহি না থাকা। দেশের প্রতিটি সংস্থাকে যদি তাদের কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হতো, তাহলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। ফেরি সমস্যা সমাধানে আমরা সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ চাই।