অর্পিত সম্পত্তি আইন

বর্তমান শাসনামলে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা অতীতের সাম্প্রদায়িক ও প্রতিক্রিয়াশীল হিসেবে নিন্দিত আমলের তুলনায় অধিকতর নিরাপদে আছে, এই ধারণার পথে এখনো বিরাট প্রতিবন্ধকতা হলো অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ২০০১বাস্তবায়ন না হওয়া। কখনো উপযুক্ত আইন না থাকা, কখনো আইনে অস্পষ্টতা, কখনো পরিপত্রের দ্ব্যর্থকতাসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে সংখ্যালঘুদের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে পাকিস্তানি আমলের ধ্যানধারণা নিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রশাসন ও রাজনীতির প্রভাবশালী অংশ সক্রিয়। ক্ষমতাসীন দল এই শক্তিকে পরাস্ত করতে একেবারেই কোনো চেষ্টা করেনি, তা নয়। কিন্তু রূঢ় বাস্তবতা হলো, দফায় দফায় আইন, আর কিছুদিন পরপর উচ্চ আদালতের দিকনির্দেশনা এবং তারপর আবার তার আলোকে পরিপত্র জারি করা এবং জেলা প্রশাসকদের তা তামিল করতে অনীহা দেখানো—এ রকম কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। একজন সংখ্যালঘু নেতা উষ্মা প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেন, অতীতে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বাড়িতে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে, আর বর্তমান শাসনামলে তাঁরা তিলে তিলে মরছেন। কথাটি পরিহাসমূলক হলেও আমরা উড়িয়ে দিতে পারি না।

গত ২৭ মে পিরোজপুর শহরের বিজয় কৃষ্ণ হালদারের সার্জিকেয়ার ক্লিনিক পুরোপুরি গ্রাস ও তাঁর পরিবারকে বাস্তুচ্যুত করতে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের এক স্থানীয় নেতার সহিংস তৎপরতার কাহিনি সংবাদমাধ্যমে ছাপা হয়েছে। তাঁর বাড়ি রক্ষায় ২৯ মে হাইকোর্ট রুলও জারি করেছেন। এ রকমের ঘটনা মাঝেমধ্যেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘটে চলেছে।

এটা এখন প্রমাণিত সত্য যে দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার ক্ষেত্রবিশেষে বল্গাহীন গতিতে চলছে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সংখ্যালঘুরাও সাধারণভাবে নাজুক অবস্থায় আছেন। অর্পিত সম্পত্তি আইন করার ১৭ বছর এবং সংখ্যালঘু সুরক্ষার দাবিদার আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতাসীন আছে প্রায় এক দশক ধরে। এখন আমরা জানছি যে সম্পত্তি ফিরে পেতে ১ লাখ ৬২ হাজার দরখাস্তকারীর মধ্যে এ পর্যন্ত ১০ হাজারের কম দরখাস্তের নিষ্পত্তি হয়েছে। এখন নতুন করে হাইকোর্টের সর্বশেষ দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নের অপেক্ষায় দিন গুনতে বসেছি। এতটা বিস্তারিত না হলেও অতীতে আমরা উচ্চ আদালতের আদেশ প্রতিপালনে ডেপুটি কমিশনারদের শিথিল মনোভাব লক্ষ করেছি। ২০ মে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামালসহ অন্য বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত সুপারিশমালা অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাই। তবে অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা সতর্ক করতে চাই যে শুধু প্রশাসনিক নির্দেশনা বা প্রস্তাবিত ট্রাইব্যুনাল কাজ শুরু করে দিলেই ‘পাকিস্তানি ভূতে’র আসর থেকে আমরা রেহাই পাব, সেই ভরসা হয় না। এই সমস্যা সমাধানে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক অঙ্গীকারে বিরাট ঘাটতি রয়েছে। এটা দূর করা ছাড়া সংখ্যালঘুরা এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবেন না।