নির্বাচনে যাব কি না বলার সময় আসেনি

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
>

প্রথম আলো: বিএনপির চেয়ারপারসন কারাগারে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন পলাতক ও স্বেচ্ছানির্বাসিত। এ অবস্থায় আপনাদের দল কেমন চলছে?

মির্জা ফখরুল: ভালো চলছে। আমরা এখন আগের থেকে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। গত তিন মাসে চারটি যৌথ সভা হয়েছে।

প্রথম আলো: সরকারি দলের সমালোচনা করতে গিয়ে আপনি সম্প্রতি মালয়েশিয়ার উদাহরণ টেনেছেন। কিন্তু আপনারা ভোটে জিতলে দলের মাহাথির কে হবেন?

মির্জা ফখরুল: নির্বাচনে যাব, সেই সিদ্ধান্ত আমরা নিইনি। বেগম খালেদা জিয়া জেলে থাকবেন, তারেক রহমান ফিরতে পারবেন না—এই পরিস্থিতিতে আমরা নির্বাচনে যাব, সেই সিদ্ধান্ত হয়নি।

প্রথম আলো: কিন্তু যাওয়ার সম্ভাবনা নাকচও করছেন না। তাহলে কি জিয়া পরিবারের বাইরে কারও প্রধানমন্ত্রী হওয়া-সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর আপনি স্থগিত রাখছেন?

মির্জা ফখরুল: স্থগিত রাখছি, কারণ, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনো আসেনি। আরও আলোচনা ও জানার দরকার আছে। নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভাবনাও নাকচ করছি না।

প্রথম আলো: বার্ধক্য ও ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে খালেদা জিয়া যদি দল ও ‘গণতন্ত্রের’ স্বার্থে জেলে যেতে পারেন, তাহলে তাঁর ছেলে কেন একই ঝুঁকি নিতে ভীত? তিনি কতকাল পলাতক থাকবেন?

মির্জা ফখরুল: উনি (তারেক রহমান) কিন্তু ভীত নন। ওনাকে এখনো প্রতি সপ্তাহে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে দুবার থেরাপি নিতে হয়। এক-এগারোর পর
তাঁর মেরুদণ্ডের যে ক্ষতিটা হয়েছিল, তা এখনো পুরোপুরি সারেনি। এই অবস্থায় তিনি দেশে ফিরলে থেরাপি পাবেন না। সে ক্ষেত্রে তাঁর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাবে। বর্তমানে দেশের যা অবস্থা, তাতে তিনি দেশে ফিরলে তাঁকে আমরা সুস্থ অবস্থায় দেখতে পাব না।

প্রথম আলো: ব্রিটেনে বর্তমানে তাঁর আইনি মর্যাদা কী?

মির্জা ফখরুল: তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন।

প্রথম আলো: ব্রিটেন কি তা সম্পূর্ণভাবে মঞ্জুর করেছে?

মির্জা ফখরুল: হ্যাঁ, সেটা তো বটেই।

প্রথম আলো: কবে তা মঞ্জুর করল?

মির্জা ফখরুল: তারিখ বলতে পারব না। দুই-তিন বছর বা তার বেশি হবে।

প্রথম আলো: তাহলে তাঁর ভবিষ্যৎ নাগরিকত্ব কী হবে? দ্বৈত নাগরিকত্ব নেবেন?

মির্জা ফখরুল: এখানে তো নাগরিকত্বের ব্যাপার নেই।

প্রথম আলো: ব্রিটিশ পাসপোর্ট?

মির্জা ফখরুল: ব্রিটিশ পাসপোর্ট তিনি ধারণ করেন না।

প্রথম আলো: তাঁর কি এখন একটি বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট রয়েছে?

মির্জা ফখরুল: আপনি যখন কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবেন, তখন আপনাকে সেই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাসপোর্ট অর্পণ করতে হবে। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পাসপোর্ট ফেরত দেয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তাঁর পাসপোর্টটি তারা বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে পাঠিয়েছিল। কারণ, তাঁর পাসপোর্ট নবায়নের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেই পাসপোর্ট বাংলাদেশ হাইকমিশন ফেরত দেয়নি। এটাই হলো বর্তমান অবস্থা।

প্রথম আলো: খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা কী?

মির্জা ফখরুল: তিনি অস্টিও আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত। সেটা এখন অনেক বেশি বেড়ে গেছে, যা তাঁর হাঁটুকেই নয়, বাঁ হাতকেও প্রভাবিত করেছে। বাঁ হাত অনেকটা ভারী হয়ে গেছে। তিনি ওই হাত দিয়ে কিছু ধরতে পারছেন না। আর স্পন্ডিলাইটিসের কারণে তাঁর ঘাড়ের ব্যথা বেড়েছে। একই সঙ্গে কিছুটা অসাড়তা দেখা যাচ্ছে।

প্রথম আলো: আদালতের নজরে এনেছেন?

মির্জা ফখরুল: না, যাইনি। আমার অভিজ্ঞতা হলো, তাঁরা মেডিকেল বোর্ড করে দেন, তাতে সরকারি চিকিৎসকদেরই প্রাধান্য থাকে। বেশির ভাগই বঙ্গবন্ধু মেডিকেল থেকে দেন। আমরা যে বেসরকারি চিকিৎসকদের অন্তর্ভুক্তি চাইব, সে বিষয়ে আমাদের আস্থা কম।

প্রথম আলো: শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি কি খালেদা জিয়ার অন্তরীণ হওয়ায় পর বদলে গেছে?

মির্জা ফখরুল: শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব বা যাব না, সেটা আমরা কখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলিনি। কারণ, সে সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা সামনে আন্দোলন করব, সরকার কী করে তা দেখেশুনে সিদ্ধান্ত নেব।

প্রথম আলো: আপনাদের গঠনতন্ত্রে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদটি কবে তৈরি হলো?

মির্জা ফখরুল: গত কাউন্সিলের আগের কাউন্সিলে, এর আগে এটি ছিল না।

প্রথম আলো: এটা কী করে গণতান্ত্রিক, এমনকি গঠনতন্ত্রসম্মত হতে পারে? গঠনতন্ত্রে লেখা আছে, চেয়ারপারসনের ‘সাময়িক অনুপস্থিতিতে’ সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হবেন। সাময়িক অনুপস্থিতিতে যাঁকে দায়িত্ব দিলেন, তিনি এক দশকের বেশি সময় দেশেই অনুপস্থিত। এটা জাতির সঙ্গে প্রহসন কি না?

মির্জা ফখরুল: এভাবে দেখা সমীচীন হবে না। পৃথিবীতে বহু দেশের বহু নেতা বাইরে থেকে দেশ পরিচালনা করেছেন, এখনো করছেন। কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাই তা গণতান্ত্রিক।

প্রথম আলো: কিন্তু এই দৃষ্টান্ত কোথায়, যেখানে হাইকোর্ট কোনো নাগরিকের পলাতক থাকা পর্যন্ত বাক্‌স্বাধীনতা নিষিদ্ধ করেছেন, গণমাধ্যম তাই তাঁর খবর ছাপে না। তাঁকেই—

মির্জা ফখরুল: অনেক উদাহরণ আছে। যেমন ইরানে আয়াতুল্লাহ খোমেনি ১৪ বছরের রাজনৈতিক নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৭৯ সালে প্যারিস থেকে ফিরে বিপ্লবের নেতৃত্ব দেন। তার আগে পাহলভি রাজতন্ত্রে তাঁর বক্তৃতা-বিবৃতি ইরানি মিডিয়ায় হয়তো ছাপা হতো না। বেনজির ভুট্টো ও নওয়াজ শরিফ আট বছরের বেশি সময় নির্বাসিত থাকার পর দেশে ফেরেন।

প্রথম আলো: কিন্তু তাঁদের বক্তব্য হাইকোর্ট কখনো নিষিদ্ধ করেননি।

মির্জা ফখরুল: সেটা আমার জানা নেই। তবে জনসমক্ষে বক্তব্য দিতে না পারলেও তারেক রহমান সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে পারছেন। বিদ্যমান প্রযুক্তির মাধ্যমে সাংগঠনিকভাবে তিনি অত্যন্ত সক্রিয়।

প্রথম আলো: ২০১৫ সালে বাংলাদেশ হাইকোর্ট এক অন্তর্বর্তী আদেশে তারেক রহমানের পলাতক অবস্থায় তাঁর সব ধরনের বক্তৃতা-বিবৃতি ছাপা নিষিদ্ধ করেন। হাইকোর্টের ওই আদেশে নজির হিসেবে সশস্ত্র আইরিশ রিপাবলিকান দল ‘শিন ফেইন’কে ব্রিটিশ সরকারের দ্বারা নিষিদ্ধের (১৯৮৮ থেকে ১৯৯৪) উল্লেখ আছে। বিবিসি এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছিল।

মির্জা ফখরুল: বাংলাদেশের গণমাধ্যম কিন্তু এদিকটি আন্তরিকতার সঙ্গে ভেবে দেখেনি। যারা বাক্স্বাধীনতা ও ভিন্নমতে বিশ্বাসী, তাদের এটা দেখা উচিত ছিল।

প্রথম আলো: বিবিসি কিন্তু হাইকোর্টে হেরে গিয়েছিল। আর আপনাকেই এটা বলতে হবে যে একটি অন্তর্বর্তী আদেশ জারির পর তিন বছর পার হলো, আপনার দলই কিন্তু এর পূর্ণাঙ্গ শুনানি বা এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে প্রতিকার চায়নি। এর কী উত্তর দেবেন?

মির্জা ফখরুল: তার কারণ অতীতের অভিজ্ঞতা। অতীতে আমরা যখন কোনো বিষয়ে উচ্চ আদালতে গিয়েছি, তখনই তা সাধারণত খারিজ হয়েছে। আমাদের সম্পর্কে আদালতের ধারণা নেতিবাচক। ম্যাডামের ক্ষেত্রে আমরা গিয়েছি, কিন্তু আমরা জানি, প্রতিকার পাব না। তবে এটুকুও বলব, বিষয়টি নিয়ে আমরা অবশ্যই চিন্তা করব। কারণ, সিদ্ধান্তটি সংবাদমাধ্যম ও বাক্স্বাধীনতার জন্য চরম হুমকি। দুর্ভাগ্যবশত যাদের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা নেই, তাদের বাক্স্বাধীনতাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রথম আলো: শিন ফেইনের তখনকার কার্যক্রমের সঙ্গে বিএনপির তুলনা?

মির্জা ফখরুল: সেটা যাবে না। কারণ, বিএনপি তো মূলধারার মধ্যে রাজনীতি করে। আমরা একাধিকবার সংসদ ও সরকার গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছি।

প্রথম আলো: আপনাদের মিত্ররা নির্বাচনে প্রায় ১০০ আসন চাইতে পারে। আপনারা কীভাবে আসন বিলিবণ্টন করবেন?

মির্জা ফখরুল: যখন সময় আসবে, তখন ভাবব। এখন ভাবছি না।

প্রথম আলো: ক্ষমতার স্বাদ পেতে উদ্‌গ্রীব বিএনপি কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারবে?

মির্জা ফখরুল: এখন দেশে যে সংকট, তাকে কেবল বিএনপি বা বাম বা ডান দলের কোনো সংকট হিসেবে দেখি না। এটি সামগ্রিক সংকট। যদি জাতীয় ঐক্য হয়, তাহলে নিশ্চয় সবাই কিছু ত্যাগ স্বীকার করবেন।

প্রথম আলো: ড. কামাল হোসেন, বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখের উদ্যোগে নতুন কিছু চোখে পড়েছে কি? নাকি প্রথাগত প্রাক্‌নির্বাচনী প্রবণতা?

মির্জা ফখরুল: দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশ রাজনীতি একটা কলুষিত আবর্তের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসার সুনির্দিষ্ট পথ বের করা খুব কঠিন হয়ে পড়ছে। আরও কয়েকটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে করতে পারলে হয়তো একটি নুতন পথ বের হতো, কিন্তু সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। যারা গণতান্ত্রিক সংগ্রামে জাতিকে একদা নেতৃত্ব দিয়েছিল, সেই দলটিই আজ সংকট তৈরি করেছে। তাই অন্য সব দল যদি ঐক্যবদ্ধ না হয়, তাহলে এখান থেকে বেরোনো বেশ কঠিন। তবে মূল সংকট রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে, সেখানে পরিবর্তন আনতে না পারলে জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী সমাধান মিলবে না।

প্রথম আলো: ড. কামাল হোসেন প্রমুখ যদি শেখ হাসিনাকে রেখে নির্বাচনকালে স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন তাঁর নিয়ন্ত্রণমুক্ত রেখে ফর্মুলা দেন, নাকচ করবেন?

মির্জা ফখরুল: এমন অলীক বিষয় নিয়ে কথা বলে লাভ নেই।

প্রথম আলো: বিএনপির বাইরে, কিন্তু বিএনপির সমর্থিত কারও প্রধানমন্ত্রিত্বও অলীক কি মনে করেন?

মির্জা ফখরুল: আলোচনা সাপেক্ষে অনেক কিছুই হতে পারে। এ রকম প্রশ্নের অনুমানভিত্তিক উত্তর আমাদের মতো দলের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। (হাসি)

প্রথম আলো: আপনি অলীক বলে নাকচ করছেন না?

মির্জা ফখরুল: আমি সেটা বলছি না। কারণ, আমরা তা ভাবছিই না। যা ভাবছি তা হলো নির্বাচনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হতে হবে। তখন অনেক কিছুই বেরিয়ে আসতে পারে।

প্রথম আলো: আপনি দেশভাগের পরের রাজনীতিটা দেখেছেন। শ্রীলঙ্কায় বন্দরনায়েকে ও পাকিস্তানে শরিফ পরিবারের বাইরে ক্ষমতা চলে গেছে। এর বাতাস আশপাশে লাগবে না?

মির্জা ফখরুল: বাতাস যা পৃথিবীজুড়ে বয়, যেটা বলেছেন দক্ষিণ এশিয়ায় যেটা বয়, তা কিছুটা তো আসতেই পারে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পরিবারের বাইরে না ভেতরের হবেন, আমি মনে করি, এ বিষয়গুলো এখন প্রধান বিষয় নয়।

প্রথম আলো: জেনারেল এরশাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার আশা কি পরিত্যাগ করেছেন? বার্তা–চালাচালি?

মির্জা ফখরুল: রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে তো কিছু নেই। সুতরাং পরিত্যাগের প্রশ্ন নেই, নির্ভর করবে পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর। তবে এ পর্যন্ত কোনো বার্তা–চালাচালি নেই। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে তাঁকে পেয়েছিলাম। কিন্তু বন্দুকের নলের মুখে তাঁকে তুলে নেওয়া হয়।

প্রথম আলো: কিন্তু বন্দুকের নলের মুখে কেউ প্রায় পাঁচ বছর মন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করেন?

মির্জা ফখরুল: বন্দুকের নল নেই, তবে মাথার ওপর খড়্গ আছে, আর তা হলো মঞ্জুর হত্যা মামলা।

প্রথম আলো: জামায়াতে ইসলামীকে কেন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করছে না, অনেক দিন কথাটা আপনাদের মুখে শুনি না।

মির্জা ফখরুল: ওটা আমরা বলি যখন তারা আমাদের আক্রমণ করে বলে জামায়াতকে আমরা কেন পরিত্যাগ করছি না।

প্রথম আলো: তার মানে দাঁড়াল আপনাদের মতৈক্য আছে, উভয়েরই জামায়াতকে লাগে।

মির্জা ফখরুল: না, আমরা তো জামায়াতকে চেয়েছি, তারা তো আমাদের সঙ্গে আছে।

প্রথম আলো: নির্বাচনী প্রচারণার মূল অ্যাজেন্ডা কী? দুর্নীতি নাকি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড?

মির্জা ফখরুল: গণতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করাসহ ওই দুটি।

প্রথম আলো: তফসিল ঘোষণার কত আগে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দেবেন?

মির্জা ফখরুল: পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। পাকিস্তানের মতো দেশ, যাকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বলা হয়, তারাও তো সরকার ও বিরোধী দল মিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান ঠিক করছে।

প্রথম আলো: অনেকের মতে, বৈধতার প্রশ্ন বড় নয়, বড় হলো একতরফা না করা। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা। বিএনপি নির্বাচনে গেলেই সরকারি দলের অনুকূলে সেই শর্ত পূরণ হবে। মন্তব্য করুন।

মির্জা ফখরুল: আমরা কারও বৈধতা দিতে কোনো নির্বাচন করব না।

প্রথম আলো: তার মানে সরকার গঠনের নিশ্চয়তা না পেলে নির্বাচনে যাবেন না?

মির্জা ফখরুল: সে কথা আমরা কখনো বলি না। গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচনে যাব।

প্রথম আলো: আওয়ামী লীগ ২১ বছর বিরোধী দলে থেকেছে। নব্বইয়ের আগে বিএনপির অধীনে সব বিতর্কিত নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। প্রতিবার হেরেছে, বর্জন করেনি। বিএনপির অংশ নিতে আপত্তি কেন?

মির্জা ফখরুল: কারণ, তখন নির্বাচন করার পরিবেশ ছিল। নির্বাচন করার আগে বা পরে তাদের অসুবিধা হয়েছে, নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে আমার জানা নেই।

প্রথম আলো: বৃহত্তম বিরোধী দল টানা ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকলে আপনারাও আরেক বৃহত্তম বিরোধী দল হয়ে ক্ষমতায় যেতে উতলা কেন?

মির্জা ফখরুল: শুধু ২১ বছর কেন, আমরা তো ৩০, ৩৫, ৪০ বছর থাকতে পারি। কত কথা বলা হচ্ছে, বেশি দিন আমরা টিকতে পারব না। বিএনপি তো আগেও একবার ৯ বছর বাইরে ছিল। এখন আবার প্রায় ১২ বছর বাইরে আছি। কিন্তু সমান শক্তি নিয়েই। বিএনপির শক্তি তার সংগঠন নয়, জনগণ।

প্রথম আলো: সম্প্রতি টেলিভিশনের এক সংলাপে আপনি বললেন, বিএনপির ১ হাজারের বেশি মানুষকে খুন করা হয়েছে, আর হানিফ সাহেব বললেন, আপনারা তাঁদের ২৬ হাজার মানুষকে খুন করেছিলেন।

মির্জা ফখরুল: ২৬ হাজার মানুষ খুনের দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এখন তো সরকার, পুলিশ, র‍্যাব হত্যা করছে। তখন এভাবে হত্যা তারা দেখাতে পারবে না।

প্রথম আলো: ক্রসফায়ার আপনারাই শুরু করেছিলেন, এমনকি সংসদে দায়মুক্তির আইন পাস করেছিলেন।

মির্জা ফখরুল: ক্রসফায়ারে তখন বিরোধী দলের কাউকে হত্যার একটি নজির তারা দেখাতে পারবে? আমি ক্রসফায়ারের সাফাই গাইছি না।

প্রথম আলো: আপনি ভুল স্বীকার করছেন না, জাতির কাছে ক্ষমাও চাইছেন না।

মির্জা ফখরুল: সে প্রশ্ন আসবে পরে। কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিকে সেদিন ভিকটিমাইজ করা হয়নি। অথচ মাদকবিরোধী অভিযানের তৃতীয় দিনে নেত্রকোনায় ছাত্রদলের এক নেতাকে অন্যায়ভাবে
হত্যা করা হয়েছে। অথচ তার নামে কোনো অভিযোগ ছিল না। 

প্রথম আলো: আপনারা রিকনসিলিয়েশনের কথা বলেন। অথচ দলের মহাসচিব হয়েও আপনি এর আগের সাক্ষাৎকারে একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আপনার দলের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারেননি। এবার কী বলবেন?

মির্জা ফখরুল: দেখুন, বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল। দল হিসেবে ওই নাশকতায় বিএনপির কোনো ভূমিকা ছিল না। ভূমিকা যদি থেকে থাকে, তাহলে তৎকালীন সরকারের ছিল। সেই সরকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সবই ছিল। বিএনপি কোনোমতেই এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। ভবিষ্যতেও কোনো দিন থাকবে না।

প্রথম আলো: জাতিসংঘের বিশেষ দূত তারানকো সাহেবের সঙ্গে আলোচনা কোথায় ভেঙে গিয়েছিল?

মির্জা ফখরুল: আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই সমঝোতায় রাজি ছিল না। তারা বলেছিল, নির্বাচন ম্যান্ডেটরি, হাতে সময় নেই। তফসিল আর পাল্টানো যাবে না। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হিসেবে করে ফেললাম। এর পরপরই বসব। একটা রাস্তা বের করব। এ কথা তাঁরা যে বলেছিলেন, তারানকো সাহেবই তার বড় সাক্ষী। তবে এটাও বলব, নির্বাচনকে অর্থবহ করতে ব্যক্তিগতভাবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছিলেন।

প্রথম আলো: আসন্ন নির্বাচন বিষয়ে চীন, ভারত, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র কী বলছে?

মির্জা ফখরুল: চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চেয়েছে। ইইউ বিরাট ভূমিকা রাখছে। রাশিয়া কিছু বলেনি।

প্রথম আলো: ভারতের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা?

মির্জা ফখরুল: অন্যান্য দেশের মতো আমাদের ব্রিফিংয়ে তারাও আসে।

প্রথম আলো: কর্নেল অলি আহমদ স্থায়ী কমিটিতে আসার আগ্রহ দেখিয়েছেন। তিনি আপনাদের মিত্র কি?

মির্জা ফখরুল: অবশ্যই মিত্র।

প্রথম আলো: তাঁর জন্মদিনে হঠাৎ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শুভেচ্ছা পাঠানোকে কীভাবে দেখেন? সুনজরে?

মির্জা ফখরুল: তাঁর সঙ্গে কিছু একটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। মনে হয় মোদি সাহেব তাঁকে তাঁর বন্ধু মনে করেন। আমি এটা নিশ্চয় খারাপ নজরে দেখি না।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

মির্জা ফখরুল: ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন...