ট্রাম্প-কিম শীর্ষ বৈঠক

কোরীয় উপদ্বীপে আকস্মিকভাবে শান্তির পথে সম্প্রতি যে অসামান্য অগ্রগতি ঘটছে, তা শান্তিকামী বিশ্বকে একটা প্রলম্বিত হতাশা ও টানাপোড়েনের মধ্যে বেশ স্বস্তিই দিয়েছে। বৈরিতা ভুলে দুই কোরিয়ার চলমান ঘনিষ্ঠতা প্রমাণ রাখছে যে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা অসম্ভব নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আকস্মিকভাবে ১২ জুনের প্রস্তাবিত শীর্ষ বৈঠক যেভাবে বাতিল করেছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, তাঁদের মধ্যে একটি বৈঠক হলেই ভোজবাজির মতো সব সংকট চুকে যাওয়ার কথা ছিল না। সব ধরনের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই শীর্ষ বৈঠকের দিনক্ষণ স্থির করা হয়েছিল। সুতরাং এই শীর্ষ বৈঠক হওয়া উচিত।

বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং–উনের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও ক্ষমতাসীন দলের ভাইস চেয়ারম্যান কিম ইয়ং-চোলের সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প-কিম শীর্ষ বৈঠকটি ১২ জুনে হবে কি না, তা তিনি জানেন না। তবে আশার বিষয়, তিনি এটা বলেছেন, গত ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে। মার্কিন পেশাদার কূটনীতিকদের মন্তব্য ও পর্যবেক্ষণ বিবেচনায় নিলে এই ইঙ্গিত মেলে যে ট্রাম্প বৈঠকটি বাতিল করে তাঁর প্রশাসনকেও কিছুটা বিস্মিত ও বিব্রত করেছেন।

গত সপ্তাহে বৈঠকটি বাতিলের পরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বৈঠকটি বাতিল করে দিলেও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ওয়াশিংটন তার সংলাপ–প্রয়াসকে এগিয়ে নিতে আগ্রহী। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এবং দুই দেশের একটি যৌথ সামরিক মহড়া বিষয়ে কোরীয় কর্মকর্তাদের সমালোচনামূলক মন্তব্যকে বৈঠক বাতিলের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প। কিছু ছাড় দেওয়ার বিনিময়ে উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগ করবে, এই ছিল শীর্ষ বৈঠকের অ্যাজেন্ডা।

তবে এটা স্বস্তির বিষয়, ট্রাম্পের ওই ঘোষণার পরে উভয় দেশের কর্মকর্তারা সিঙ্গাপুরে এবং অন্যত্র আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন। কোরীয় উপদ্বীপে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারলে তার বিরাট ইতিবাচক প্রভাব বিশ্বের অন্যান্য পুরোনো দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের অবসানে একটা আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করবে। সে কারণে শান্তিকামী বিশ্বনেতাদের উচিত হবে উভয় দেশের শীর্ষ নেতাদের অবিরাম উৎসাহ জুগিয়ে চলা, যাতে ট্রাম্প-কিম বৈঠকটি ভেস্তে না যায়।

একটি বৈঠকে বসলেই দাবি মানামানির ক্ষেত্রে একটা বিরাট ফয়সালা হয়ে যাওয়া কোনো পক্ষেরই লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। দীর্ঘকালীন বৈরিতা, উত্তেজনা, পাল্টাপাল্টি হুমকি, এমনকি মুখ দেখাদেখি বন্ধের পরিবেশ বজায় থাকার প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প-কিম শীর্ষ বৈঠক সংলাপের মাধ্যমে সংকট নিরসনের ইতিহাসে একটি মাইলফলক ঘটনা হয়ে থাকবে। অামরা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্যের সঙ্গে একমত যে দুই দেশের সামনে একটি ‘বিরাট মুহূর্ত সমাগত’ এবং তাকে ‘গোল্লায় যেতে দিলে তা হবে বিয়োগান্ত’।