দাকোপের 'মিনি পুকুর'

খুলনার দাকোপ উপজেলার একটি গ্রামে চাষিরা সবজি চাষে যে অভিনব সাফল্য অর্জন করেছেন, তা সারা দেশে অনুসৃত হলে আমাদের কৃষি খাতের চেহারা অনেক বদলে যেতে পারে। উপকূলীয় ওই অঞ্চলের মাটি ও পানিতে লবণাক্ততা ফসল ফলানোর পক্ষে একটা বড় অন্তরায়, কিন্তু সে জন্য কৃষকেরা হাত গুটিয়ে বসে নেই। আমাদের কৃষিবিজ্ঞানী ও গবেষকেরাও অঞ্চলভেদে প্রতিকূল প্রাকৃতিক বাস্তবতায় ফসল ফলানোর নানা বিকল্প পদ্ধতি উদ্ভাবনে সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। খরাসহিষ্ণু, বালাই-প্রতিরোধী, উচ্চফলনশীল এবং অপেক্ষাকৃত কম সময়ে ফসল তোলা যায় এমন নতুন নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করা হয়েছে। এভাবে গোটা দেশের কৃষি উৎপাদন অনেক বেড়েছে, ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে, উত্তরাঞ্চল থেকে মঙ্গা বিদায় নিয়েছে, পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে চলেছে।

খুলনার দাকোপ উপজেলার কৃষি বিভাগ ওই অঞ্চলে একই জমিতে সারা বছর মাছ ও শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসল ফলানোর এক সৃজনশীল পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের সঙ্গে অভিযোজনের কৌশল হিসেবে টেকসই কৃষিপ্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও ফসলের বিচিত্রকরণ নামের একটি প্রকল্পের আওতায় উদ্ভাবন করা হয়েছে ‘মিনি পুকুর’ নামের একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে একটি জমির পাঁচ ভাগের এক ভাগ জায়গায় একটি পুকুর কেটে সেই মাটি দিয়ে জমির বাকি অংশ উঁচু করা হয়। বর্ষাকালে বৃষ্টির মিষ্টি পানি পুকুরে জমা হলে সেখানে মাছ চাষ করা হয়, আর উঁচু করা জমিতে বেগুন-টমেটোসহ অন্যান্য ফসল সারা বছর ফলানো হয়। পুকুরের ওপরে একটি জাল টেনে দেওয়া হয়, সেখানে শসা, করলা, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, ঝিঙে ইত্যাদি লতানো সবজির চাষ করা হয়। এসব ফসলে সেচ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় ওই পুকুরের মিঠা পানি।

এভাবে মিনি পুকুরপদ্ধতি অত্যন্ত ফলপ্রসূ ও লাভজনক হয়ে উঠেছে। মাত্র ২০ শতাংশ জমি ব্যবহার করে একজন চাষি বছরে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করতে পারছেন। ২৩ জুন প্রথম আলোর খুলনা অঞ্চলবিষয়ক পাতায় এ বিষয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। সেখানে নিরাপদ রায় নামের এক কৃষকের মিনি পুকুরের যে বিবরণ রয়েছে, তা দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলোর কৃষকদের জন্য অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক হতে পারে। ইতিমধ্যে দাকোপ উপজেলার কৃষকদের কাছে মিনি পুকুর জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অন্যান্য জেলা-উপজেলার কৃষি বিভাগও তাদের অঞ্চলের কৃষকদের এই পদ্ধতি অবলম্বনে উৎসাহ জোগাতে পারে।

শুধু উপকূলীয় অঞ্চলই নয়, সারা দেশেই এই মিনি পুকুরপদ্ধতি অনুসরণ করে স্বল্প ছোট-বড় সব কৃষক লাভবান হতে পারেন। বিশেষত যাঁদের জমি কম, তাঁদের জন্য এই পদ্ধতি খুবই জুতসই। কৃষি বিভাগের উচিত মিনি পুকুরপদ্ধতির জনপ্রিয়তা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রচারণা চালানো।