পাবনায় জনসুরক্ষা হেল্পলাইন

পাবনায় শিশুর প্রতি সহিংসতা, বাল্যবিবাহসহ নানা সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধ করতে ‘জনসুরক্ষা হেল্পলাইন’ চালুর বিষয়টি নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

৯ জুলাই প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, জনসুরক্ষা হেল্পলাইন পাবনা জেলা প্রশাসনের ত্রিবার্ষিক পরিকল্পনার একটি অংশ। এই কর্মসূচি সফল করতে জেলা প্রশাসন জেলার প্রত্যন্ত সব গ্রাম, হাটবাজার, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ ও থানার সামনে একটি করে সাইনবোর্ড স্থাপন করবে। এসব সাইনবোর্ডে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তার নম্বর থাকবে। মাদক, সহিংসতা, বাল্যবিবাহসহ যেকোনো সামাজিক সমস্যায় সাধারণ মানুষ নম্বরগুলোতে ফোন করে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারবে। দেশের মধ্যে পাবনায় প্রথম এ ধরনের কার্যক্রম চালু হলো।

আমরা মনে করি, এই হেল্পলাইন পাবনার সাধারণ মানুষের ব্যাপক উপকারে আসবে। পাবনাকে অনুসরণ করে একই ধরনের উদ্যোগ দেশের অন্যান্য জেলা প্রশাসন নিতে পারে। আমাদের সমাজে, বিশেষ করে শিশু ও নারীর প্রতি সহিংসতা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সমাজ আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন। অল্প বয়সী মেয়েরা নিজের বিয়ে ঠেকিয়ে দিচ্ছে—সমাজে এমন দৃষ্টান্তও তৈরি হয়েছে। তারপরও দেশ থেকে এ সমস্যাটি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না। জেলায় জেলায় এ ধরনের হেল্পলাইন চালু হলে অনেক মানুষ উপকৃত হবে।

জেলা পর্যায়ে পাবনায় প্রথম এ ধরনের হেল্পলাইন চালু হলেও জাতীয় পর্যায়ে নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় হেল্পলাইন চালু রয়েছে অনেক দিন ধরে। ছয় বছর আগে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় জাতীয় টোল ফ্রি হেল্পলাইন নম্বর ১০৯ চালু করে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুকে উদ্ধারের ক্ষেত্রে এই হেল্পলাইন কার্যকর ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া শিশু সুরক্ষায় রয়েছে চাইলড হেল্পলাইন, নম্বর ১০৯৮। এই নম্বরে ফোন করে যে কেউ শিশু অধিকার লঙ্ঘন, নির্যাতনের ঘটনা জানিয়ে পরামর্শ ও সহায়তা চাইতে পারে।

তবে এ-ও ঠিক যে দেশের অনেক মানুষ এসব হেল্পলাইন সম্পর্কে খুব একটা জানে না। এ জন্য ব্যাপক প্রচারণা দরকার। ১০৯ নম্বরটি বেশিসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে গত বছর স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকের শেষ প্রচ্ছদে নম্বরটি সংযুক্ত করা হয়। এ রকম অন্যান্য হেল্পলাইন নম্বরও পাঠ্যপুস্তকে সংযোজন করার উদ্যোগ নিতে হবে। এ ধরনের কার্যক্রমের প্রচার বাড়ানোর লক্ষ্যে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র, যানবাহন, যাত্রীছাউনি, হাসপাতাল, বাড়িঘর, দোকানপাটে এসব নম্বরের উপযোগিতাসংবলিত স্টিকার লাগানো যেতে পারে। গ্রাহকদের মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠানো যেতে পারে। মোট কথা, প্রচারণা দরকার। জনগণ যদি বিষয়টি না জানে তবে এ ধরনের হেল্পলাইন চালু করে ফল পাওয়া যাবে না।