হঠাৎ ককটেল

যেদিন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সিটি নির্বাচন নিয়ে বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির বৈঠক করলেন, সেখানকার নির্বাচনী পরিবেশ ভালো বলে সন্তোষ প্রকাশ করলেন, সে দিনই বিএনপির দলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগকালে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটল। নিকট অতীতে সিটি নির্বাচন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে উত্তাপ-উত্তেজনা থাকলেও তা বাগ্‌বিতণ্ডার মধ্যে সীমিত ছিল। হঠাৎ করে ঘটা এই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা উদ্বেগজনক ও নিন্দনীয়। প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থীর পক্ষে দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা মঙ্গলবার সকালে গণসংযোগ করছিলেন। কর্মীদের নিয়ে তিনি যেখানে জড়ো হয়েছিলেন, এর কাছেই পরপর তিনটি ককটেল ছুড়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। বিস্ফোরণের পর স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়ে আহত হন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাসহ তিনজন।
এ সন্ত্রাসী ঘটনাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। একজন প্রার্থীর নির্বাচনী জনসংযোগকালে ককটেল নিক্ষেপ করে সন্ত্রাসীরা তাদের শক্তির কথাই জানিয়ে দিল। সরকারের ভাষ্যমতে, সবকিছুই যদি ঠিক থাকে, তাহলে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীরা এ অঘটন ঘটানোর সাহস পেল কোথায়? সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত ছিল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানো, সেখানে তারা একে অপরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি করছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে যেভাবে একে অপরকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে, তাতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে অপরাধীদের বিচার তাদের কাছে মুখ্য নয়, মুখ্য হলো রাজনৈতিক ফায়দা লাভ। এই রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে না পারলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে।
ঘটনাটি ঘটেছে সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের সাগরপাড়া বটতলার মোড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য হলো, তিনটি মোটরসাইকেলে করে এসে দুর্বৃত্তরা ককটেল ছুড়ে পালিয়ে যায়। বিকট শব্দের পর চারপাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এতে বিএনপির একজন নেতা ও দুজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত হবে এসব রাজনৈতিক বিতণ্ডাকে আমলে না নিয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো। যত দ্রুত সম্ভব তদন্তকাজ শেষ করতে হবে। দেরি হলে ঘটনার আলামত নষ্ট হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্য হলো হামলাকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করা। সে সঙ্গে রাজশাহীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো রকম ঘাটতি আছে কি না, সেটিও চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতে্যক নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়াই সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব।
রাজনৈতিক বিতর্কে না গিয়েও এ কথা বলা যায় যে যারা চায় না শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হোক, তারাই এই সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে। নির্বাচনের বাকি আছে মাত্র ১০ দিন। এ ঘটনার মাধ্যমে হয়তো সন্ত্রাসীরা জনগণ তথা ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু দুর্বৃত্তদের সেই উদ্দেশ্য কখনোই সফল হতে দেওয়া যাবে না। রাজশাহীর পাশাপাশি একই দিন আরও দুই সিটিতে (সিলেট ও বরিশাল) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সামনে রেখে তিন সিটিতেই বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। সেখানে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে ভোটাররা নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে উৎসাহী হন।
আমাদের দেশে মানুষ নির্বাচনকে দেখে উৎসব হিসেবে। সেই উৎসবের আনন্দ যারা ম্লান করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ হামলার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা থাকুক আর না-ই থাকুক, অপরাধীদের খুঁজে বের করাটাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠিন চ্যালেঞ্জ। আশা করি, তারা চ্যালেঞ্জ নিতে দ্বিধা করবে না। অবিলম্বে হামলাকারীদের খুঁজে বের করুন।