ঝিনাইদহে অবৈধ বাঁধ অপসারণ

ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের খাল ও নদীতে অবৈধভাবে তৈরি বাঁধ অপসারণকে আমরা স্বাগত জানাই।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী ইসলামের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত গত এক সপ্তাহে কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে সদর উপজেলার কালিচরণপুর, দোগাছি, ঘোড়শাল, ফুরসন্দি, গান্না ইউনিয়নের নবগঙ্গা, ফটকি, রাজারামের খাল, কুঠি দুর্গাপুর, কালুহাটি খালসহ বিভিন্ন নদী ও খালের অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদ করেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ সদস্য ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা এসব অভিযানে সহযোগিতা করেন। বাঁধ অপসারণ করায় এলাকার হাজার হাজার একর রোপা আমনের ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়। কেননা বাঁধগুলোর কারণে এসব খাল ও নদীতে এমন জলাবদ্ধতা দেখা দেয় যে যেকোনো সময় পানি উপচে ফসলি জমিগুলো ভেসে যাওয়ার ঝুঁকিতে ছিল।

নদ–নদীগুলোতে প্রায়ই প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া বাঁধ নির্মাণ করা হয়। পানি আটকে মাছ শিকারের জন্য, মালামাল পরিবহন, মানুষসহ যানবাহন চলাচলের জন্য এসব বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এসবের বেশির ভাগই করা হয় অপরিকল্পিতভাবে নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী। অনেক সময় নদী-নালাগুলোর উৎসমুখে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ফলে নদীর পানিনিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। পানি উপচে প্লাবিত হয় আশপাশের ফসলি জমি। নষ্ট হয় ধান ও অন্যান্য ফসল। নদ-নদীতে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নৌযান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।

গত মার্চ মাসের বিভিন্ন পত্রপত্রিকার খবর, মুন্সিগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী শিলই ও দীঘিরপাড় ইউনিয়নঘেঁষা পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণ করে ট্রলি, মাহেন্দ্র ও মোটরসাইকেল পারাপার করা হচ্ছে। বাঁধ নির্মাণস্থলে টোলঘর বসিয়ে প্রতিদিন আদায় করা হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। এ বাঁধের কারণে পদ্মা নদীর জোয়ার-ভাটার পানি প্রবাহিত হওয়ার স্বাভাবিক গতি বন্ধ হয়ে গেছে। কী ভয়াবহ একটি খবর!

এভাবে অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করা হলেও এগুলো অপসারণে খুব একটা তৎপরতা নেই বা অবৈধ বাঁধ স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে তেমন একটা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। এটা খুবই দুঃখজনক। অথচ নদ-নদী ধ্বংস হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণ। তাই ঝিনাইদহ সদর উপজেলার খাল ও নদী থেকে অবৈধ বাঁধ অপসারণের খবরটি আমাদের মনে আশা জাগায়। দেশের প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা যদি এমন উদ্যোগ নেন, তাহলে দেশের নদ-নদীগুলোতে অবৈধভাবে কোনো বাঁধ বা স্থাপনা গড়ে উঠতে পারবে না।