'মানব পাচারকারী'র জামিন

অতীতে নানা সময়ে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের তরফে এই অভিযোগের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে যে তারা অনেক সময় দুর্ধর্ষ আসামিদের অনেক ঝুঁকি ও ত্যাগ স্বীকার করে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু এসব আসামি অনেক সময় সহজেই ছাড়া পেয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। এমনকি পরিষ্কার করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কখনো উচ্চারণ না করলেও অনেক সময় আকারে–ইঙ্গিতে দায়িত্বশীল সরকারি প্রশাসন যুক্তি দেয় যে ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার অকার্যকারিতার কারণে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দুর্ধর্ষ আসামিদের দমন করার প্রয়াস চালানো হয়ে থাকে।

এটা নিশ্চিতভাবেই খোঁড়া অজুহাত। তবে দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, বিচার বিভাগ পৃথক্‌করণের পরেও হাইকোর্টে জামিন চাওয়ার দরখাস্তে কখনো আইনজীবীরা কারণ দেখান যে নিম্ন আদালতের ওপর নির্বাহী বিভাগের প্রভাব রয়েছে। এ কারণে আমরা জামিন বা আগাম জামিন পেতে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। অস্বীকার করা যাবে না যে ঈদের আগে কোটা ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা জামিন লাভ করেছেন। আর এই জামিনের জন্য অনেক বিশিষ্ট আইনজীবীও সরকারি প্রশাসনের শুভবুদ্ধির উদয় হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।

জামিন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর একটা বড় ভূমিকা থাকেই। তাঁকে দেখা যায় কখনো জামিনের প্রবল বিরোধিতা করতে, আবার কখনো আদালতে শুনানিকালে তঁার হদিস থাকে না। আবার উপস্থিত থাকলেও তিনি দায়সারা ভূমিকা পালন করেন। তেজগাঁও কলেজে শিক্ষকতার আড়ালে মানব পাচারের দায়ে অভিযুক্ত আছেমকে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দুবার গ্রেপ্তার এবং দুবার জামিন হওয়ার ঘটনা আমাদের যুগপৎ বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। সব তথ্য হাতে থাকার পরেও আছেম কীভাবে এত নাটকীয়তায় বেরিয়ে যেতে পারলেন, তার একটা কৈফিয়ত এই মামলার প্রসিকিউশন থেকে পাওয়া অপরিহার্য। যে তথ্য সিআইডির হাতে ছিল, তা শুনানিকালে সরকারি আইনজীবীর হাতে ছিল কি না এবং তিনি তা আদালতের নজরে এনেছিলেন কি না। এ ধরনের কৈফিয়ত নেওয়ার বিধান চালু করা হলে পরেই আছেমদের মতো ছদ্মবেশী অপরাধীদের সমাজে নিরাপদ বিচরণ কার্যকরভাবে রোধ করা সম্ভব হবে।

এটা সত্যি কৌতূহলোদ্দীপক যে এত বড় মাপের একজন ধূর্ত অপরাধী হিসেবে যিনি অভিযুক্ত হলেন এবং যঁাকে ১৪ আগস্ট তিন দিন রিমান্ডে নেওয়ার পরে দ্বিতীয় দফায় রিমান্ড চাইলে আদালত তঁার রিমান্ড নামঞ্জুর তো করেনইনি, বরং জামিনও মঞ্জুর করেছেন। ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি, ১৯ আগস্ট তাঁকে পুনরায় গ্রেপ্তারের পরদিন আদালতে তোলামাত্র তিনি তাৎক্ষণিক জামিন পান বলে খবরে জানা যায়। এটা তো খুবই অস্বাভাবিক বলে প্রতীয়মান হয়। আদালতের সামনে সব তথ্য ছিল কি না, সেটাই আগে জানা দরকার।