চট্টগ্রামে ভেজালবিরোধী অভিযান

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কেক বানানোর অপরাধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানা এলাকার কালামিয়া বাজারের মায়ের দোয়া বেকারিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং দেড় শ কেজি কেক ধ্বংস করেন। এ খবর আমাদের মনে স্বস্তি দিলেও এতে আসলে কতখানি কাজ হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।

বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা গত বুধবার বাকলিয়া থানাসহ নগরের কয়েকটি এলাকায় দোকান ও ফার্মেসিতে অভিযান চালান। এ সময় তাঁরা মায়ের দোয়া বেকারির দেড় শ কেজি কেক ধ্বংস করার পাশাপাশি কে বি আমান আলী সড়কের একটি ফার্মেসিকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করায় পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং ওষুধগুলো ধ্বংস করেন। এ ছাড়া আগ্রাবাদের একটি দোকানকে কাঁচা মাংসের সঙ্গে রান্না করা খাবার সংরক্ষণ করায় আট হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বেশি মূল্যে বোতলজাত পানি বিক্রি করায় স্টেশন রোডের একটি হোটেলকে তিন হাজার টাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণ কোমল পানীয় বিক্রি করায় একটি ফাস্ট ফুডের দোকানকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেখানে থাকা ১৩১ বোতল কোমল পানীয় ধ্বংস করা হয়।

সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য হওয়া চাই ভেজালমুক্ত, নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর। কিন্তু দেশে এখন ভেজালমুক্ত খাদ্য পাওয়াই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার লোভে খাদ্যে ভেজাল মেশাচ্ছে। অনেক ফাস্ট ফুডের দোকান, হোটেল ও রেস্তোরাঁয় খাবার তৈরি হয় অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে। চিকিৎসকদের মতে, এসব ভেজাল খাবার খেয়ে মানুষ পেটের পীড়া, গ্যাস্ট্রিক-আলসার, চর্মরোগ, হাঁপানি, লিভার ও কিডনির রোগে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি মরণব্যাধি ক্যানসারেও আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

এ প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রামে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এই ভেজালবিরোধী অভিযান নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই ধরনের অভিযান কি যথেষ্ট? অতীতে দেশের বহু প্রতিষ্ঠানে এ রকম ভেজালবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু খাদ্যে ভেজাল দেওয়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার, কোমল পানীয় বা ওষুধ বিক্রি হওয়া থামেনি। ২০১৩ সালে সরকার নিরাপদ খাদ্য আইন নামে একটি আইন প্রণয়ন করে, যাতে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর শাস্তি হিসেবে ৭ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু এ আইনের কোনো প্রয়োগ নেই।

শুধু লোক দেখানো অভিযান নয়, ভেজালের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর নজরদারি থাকতে হবে। যারা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বা খাদ্য বিক্রি করছে, তাদের প্রত্যেককে বিচারের মুখোমুখি করতে পারলেই ভেজালের প্রকোপ কমবে।