মালয়েশীয় শ্রমবাজার

মালয়েশিয়ায় বন্ধ হয়ে যাওয়া শ্রমবাজার নতুন করে উন্মুক্ত হওয়ার খবরটি নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক। প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলামের সঙ্গে মালয়েশীয় মানবসম্পদমন্ত্রী কুলাসে গারানের বৈঠকের পর দেশটি বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়ার প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করতে রাজি হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সেখানে দুই দেশের মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠক ছাড়াও যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয় যে এখন থেকে লাইসেন্সধারী সব এজেন্সিই মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে পারবে। জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স আছে, বর্তমানে এমন এজেন্সির সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ২০০। এ সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছে বিদেশে কর্মী প্রেরণকারী এজেন্সিদের সংগঠন বায়রা।

বায়রার এই মনোভাবকে আমরা স্বাগত জানাই। অতীতে জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে সরকার ও সংগঠনটির মুখোমুখি অবস্থানের কারণে দেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি বিপদে পড়েছেন বিদেশে গমনেচ্ছুক শ্রমিকেরাও। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয় যে জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে বাংলাদেশি বৈধ সব রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠাতে পারবে। অপর দিকে ‘কলিং ভিসায়’ কর্মী নিয়োগের বিষয়েও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় অপেক্ষমাণ মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের পথ উন্মুক্ত থাকবে। এ ছাড়া মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অনিয়মিত কর্মীদের নিয়মিতকরণের বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকার ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

উল্লেখ্য, নানা অভিযোগ তুলে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি পদ্ধতিতে) বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেওয়া শুরু করে দেশটি । ২০১৬ সালে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার সমঝোতা হয়। পাঁচ বছর মেয়াদি এই সমঝোতা চুক্তির আওতায় ১০টি জনশক্তি রপ্তানিকারক এজেন্সিকে লোক পাঠানোর অনুমতি দিলে এর বিরোধিতা করে বায়রা।

ওদিকে মালয়েশিয়ার নতুন সরকার অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগে এই ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে অস্বীকৃতি জানায়। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে মাথাপিছু দুই হাজার রিঙ্গিত খরচ হলেও এজেন্টরা বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে ২০ হাজার রিঙ্গিত আদায় করেন। এর মাধ্যমে ওই সিন্ডিকেট গত দুই বছরে ২০০ কোটি রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছে। এ অবস্থায় গত ১৪ আগস্ট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ কর্মী নিয়োগের বিশেষ পদ্ধতি থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর ফলে দেশটিতে বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়।

একই সঙ্গে সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি অনিয়মিত শ্রমিকদের বিরুদ্ধে নানা রকম হয়রানি শুরু হয়, যা আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। মালয়েশীয় সরকারকে বুঝতে হবে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে যদি সেখানে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠানো হয়ে থাকে, তার সঙ্গে মালয়েশীয় কর্মকর্তারাও জড়িত। মাহাথির সরকার যেই সংস্থার অনিয়ম-দুর্নীতি খুঁজে পেয়েছে, সেটি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান নয়।

বাংলাদেশ থেকে ফের জনশক্তি নেওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য আমরা মালয়েশীয় সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। সেই সঙ্গে এ–ও প্রত্যাশা থাকবে, সেখানে অনিয়মিত শ্রমিক হিসেবে যেসব বাংলাদেশি চিহ্নিত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি যেন মানবিক আচরণ করা হয়।

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো নিয়ে অতীতে কেলেঙ্কারি কম হয়নি। সিন্ডিকেট ব্যবস্থা যে কাজ করবে না, সেটি বুঝতে কেন সরকারের তিন বছর লাগল? এখন সরকারের উচিত হবে দেশটিতে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে তদারকি বাড়ানো। উন্মুক্ত বাজার যেন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যাতে কেউ নতুন করে সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।