যত্রতত্র সিগারেট বিক্রি

এটা সবার জানা যে ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অনেকের মতে, ধূমপান মানে বিষ পান করা। কিন্তু তারপরও বহু মানুষ ধূমপান করছে। বিশেষ করে কিশোর-তরুণেরা। এর ফলে তারা আক্রান্ত হচ্ছে ফুসফুসের ক্যানসার, হৃদ্‌রোগ, ব্রঙ্কাইটিস, যক্ষ্মা, ডায়াবেটিস, হাঁপানিসহ নানা প্রাণঘাতী রোগে।

এ প্রেক্ষাপটে অডেশাস নামে ধূমপানবিরোধী একটি সংগঠন বরিশাল নগরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে সিগারেটের দোকান তুলে দেওয়ার যে দাবি জানিয়েছে, আমরা তার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি। বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সংগঠনটি এ দাবি জানিয়ে গত বুধবার বরিশালের জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। এতে বলা হয়, বরিশাল নগরের প্রায় প্রতিটি স্কুল-কলেজের সামনে সিগারেটের দোকান রয়েছে। এই দোকানগুলোর কারণে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ধূমপানে উৎসাহিত হচ্ছে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে সিগারেটের দোকান তুলে দিতে হবে।

গত মে মাসে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা জানায়, বাংলাদেশের স্কুলের আশপাশের ৯০ শতাংশ দোকানে সিগারেটসহ বিভিন্ন তামাক ও তামাকজাত পণ্য বিক্রি করা হয়। একই অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, স্কুল-কলেজের আশপাশে ৫০০ মিটারের মধ্যে কোনো দোকানে বিড়ি-সিগারেট কিংবা অন্য কোনো তামাকপণ্য বিক্রি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া তিনি ২০২০ সাল থেকে তামাকপণ্যের ক্ষতিকর দিক পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করারও আশ্বাস দিয়েছিলেন। ওই ঘোষণার পর চার মাসের বেশি পার হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, মাদকাসক্তের প্রথম স্তরই হচ্ছে বিড়ি বা সিগারেট।

তামাক বিষয়ে বৈশ্বিক প্রকাশনা ‘দ্য টোব্যাকো অ্যাটলাস ২০১৮’–এর তথ্য অনুযায়ী, তামাকের কারণে বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ৬২ হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা, অকালমৃত্যু ও পঙ্গুত্বের কারণে প্রতিবছর ক্ষতি হয় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে, এ খাতে সরকারের বছরে আয় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ফলে বছরে ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) তথ্যমতে, প্রতিবছর পুরুষদের পরোক্ষ ধূমপানে ক্ষতির শিকার হচ্ছে অধূমপায়ী এক কোটি নারী।

কাজেই তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের হেলাফেলার আর কোনো সুযোগ নেই। কিশোর–তরুণেরা যাতে ধূমপানে আকৃষ্ট না হয়, সে জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে বিড়ি–সিগারেটের দোকান নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ধূমপানের কুফল সম্পর্কে ব্যাপক ভিত্তিতে প্রচারণা চালাতে হবে। এর পাশাপাশি উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান করলে শাস্তির বিধান রেখে সরকার যে আইন করেছিল, তার বাস্তবায়ন জরুরি। আইন বাস্তবায়ন না করলে জারি থাকলে কী লাভ?