ফেরি ও নাব্যতা-সংকটে ভোগান্তি

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে নাব্যতা-সংকট এবং মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি-সংকটের কারণে এসব নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীদের যে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথটি রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর যোগাযোগের অন্যতম নৌপথ। কিন্তু পদ্মায় নাব্যতা-সংকটের কারণে এ নৌপথে এখন ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে এই নৌপথের অনেক যাত্রী ও যানবাহন বাধ্য হয়ে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে যাতায়াত করছে। তাই নৌপথে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। কিন্তু এখানেও দেখা দিয়েছে নাব্যতা-সংকট। এর পাশাপাশি ফেরি-সংকটের কারণে সময়মতো যানবাহনগুলো নদী পার হতে পারছে না। আর এতে ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকদের। দীর্ঘ সময় ধরে ঘাটে আটকে থাকতে হচ্ছে তাদের।

দুঃখের বিষয় হচ্ছে এ রকম সংকট প্রতিবছরই দেখা দেয়। হয় নাব্যতা-সংকট, নয়তো ফেরি-সংকটের কারণে এ দুটি নৌপথ বন্ধ থাকে অনেক দিন ধরে। ফলে এসব নৌপথে যাতায়াতকারীদের প্রতিবছরই দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

বাংলাদেশের নদ-নদীগুলোর জন্য নাব্যতা-সংকট এক বিরাট সমস্যায় পরিণত হয়েছে। নাব্যতা-সংকটের কারণে লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত নৌকা, স্পিডবোট, মালবাহী জাহাজ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়া ছাড়াও জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবন হুমকির মধ্যে পড়ছে। নদীর ওপর নির্ভরশীল কৃষক ও জেলেদের জীবন-জীবিকা মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়ছে। অন্যদিকে ফেরিস্বল্পতা দেশের নৌপথগুলোর জন্য একটি বিরাট সমস্যা। প্রায় সব নৌপথেই এই সমস্যা রয়েছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ২০টি ফেরি থাকার কথা থাকলেও সেখানে এখন রয়েছে ১৮টি ফেরি। এর মধ্যে দুটি নষ্ট। বাকি ১৬টি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। এ ছাড়া এসব ফেরির বেশির ভাগই পুরোনো ও লক্কড়ঝক্কড়। ফলে যাত্রী ও যানবাহন পরিবহনেও এগুলোর অনেক সময় লাগে।

সরকারকে এখন এসব সংকট সমাধানে নজর দিতে হবে। নাব্যতা-সংকট দূর করার উপায় হচ্ছে নদী নিয়মিত ও পরিকল্পিতভাবে খনন করা। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই যেনতেনভাবে খনন করা হচ্ছে। এতে অনেক অর্থ ব্যয় হলেও কাজের কাজ কিছু হয় না। নদী খননের ব্যাপারে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। নৌপথগুলোয় ফেরি-সংকট দূর করার জন্যও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় ফেরির বদলে নতুন ফেরি দিতে হবে। এ ছাড়া এসব ফেরির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। আমরা চাই কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়াসহ সব নৌপথের উন্নয়নে সরকার যথাযথ ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।