পরিবহনশ্রমিকেরা রাস্তায় কেন

বাংলাদেশে সড়ক পরিবহনে বিশৃঙ্খলা একটি গুরুতর জাতীয় সমস্যা হিসেবে বহু বছর ধরে আলোচিত হচ্ছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে সবাই কথা বলছেন। সম্প্রতি স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নেমে দেশজুড়ে বড় রকমের একটা ঝাঁকুনি দিয়ে গেল। তাদের আন্দোলনের চাপে সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের আশ্বাসবাণী উচ্চারণ করা হলো। কিছু বাস্তবিক পদক্ষেপও নেওয়া হলো। কিন্তু সড়ক–মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারানো কমেনি, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির খবর আসছে।

আমরা যখন এ রকম হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চাইছি, তখন বাড়তি হতাশার কারণ যুক্ত হচ্ছে সড়ক পরিবহন খাতের মালিক ও শ্রমিকদের নতুন তৎপরতার মধ্য দিয়ে। সদ্য পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে তাঁরা আন্দোলন শুরু করেছেন।

পরিবহনশ্রমিকেরা ঢাকা ও এর আশপাশের ১৭টি জেলায় সব ধরনের পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছেন। আর পরিবহনমালিক–শ্রমিক ঐক্য পরিষদ থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, ১২ অক্টোবরের মধ্যে আইনটি সংশোধন করা না হলে তাঁরা পরিবহন ধর্মঘটসহ আরও বড় কর্মসূচি নেবেন।

পরিবহনশ্রমিকেরা গত রোববার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। পশ্চিম দোলাইরপাড় এলাকায় কিছু পরিবহনশ্রমিক পণ্যবাহী যানবাহন থামিয়ে চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করার নামে হেনস্তা করেন; লাইসেন্স ছিল না—এমন চালকদের মুখে পোড়া ইঞ্জিল অয়েল মেখে দেওয়া হয়। পরিবহনশ্রমিকদের একটা অংশ গাজীপুরে গাড়ি ভাঙচুর করেছেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, এমনকি প্রহারও করেছেন, পথচারীদের হেনস্তা করেছেন।

এইসব আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শ্রমিকেরা শান্তিপূর্ণভাবে তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারেন, দাবি–দাওয়া জানাতে পারেন। কিন্তু এই ধরনের জবরদস্তিমূলক ও বেআইনি কর্মকাণ্ড অবশ্যই পরিহার্য। আর তাঁরা যে দাবিতে এসব করছেন এবং ধর্মঘটের হুমকি দিচ্ছেন, সেই দাবিরও যৌক্তিকতা আছে কি না, তা ভেবে দেখা উচিত।

লাইসেন্স ছাড়া বা ভুয়া লাইসেন্স নিয়ে যানবাহন চালানো, ট্রাফিক আইন অমান্য করে বেপরোয়াভাবে যান চালিয়ে দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি ঘটানো—এসব প্রবণতা ব্যাপক মাত্রায় রয়েছে। এই বাস্তব সত্য অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে পরিবহন খাতের পুরো শ্রমিকসমাজই এসব প্রবণতার শিকার।

দক্ষ চালকও অবশ্যই আছেন, তাঁরা বৈধভাবে লাইসেন্স নিয়েই যানবাহন চালান, ট্রাফিক আইনও মেনে চলার চেষ্টা করেন। কিন্তু যাঁরা এসবের ব্যত্যয় ঘটান এবং সেই কারণে সড়ক–মহাসড়কের বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি দিনকে দিন বাড়ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না বা তাঁদের
গুরুতর অপরাধের জন্য শাস্তি কমাতে হবে—এটা কোনো যুক্তিসংগত অবস্থান হতে পারে না।

আমরা আশা করব, সড়ক পরিবহন খাতের মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠনগুলোর দায়িত্বশীল নেতারা সড়কের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার গুরুত্ব উপলব্ধি করবেন। অযৌক্তিক ও জনস্বার্থের প্রতিকূল অবস্থান থেকে সরে আসবেন।