বাণিজ্যযুদ্ধের সুফল

বছরের শুরুতে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়, তখন এর বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে বলে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ১০ মাসের মাথায় এসে জানা গেল, সেই আশঙ্কা অমূলক এবং দুই পরাশক্তির মধ্যকার বাণিজ্য দ্বৈরথের সুফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। এটি আশাব্যঞ্জক।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, চীন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ওপর বাড়তি শুল্কারোপ করায় যুক্তরাষ্ট্রের অনেক নতুন ক্রেতা বাংলাদেশে আসছেন। পুরোনো ক্রেতারাও আগের চেয়ে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্রয়াদেশ বাড়িয়েছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি আরও বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে। যদিও তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএ প্রকাশ্যে এসব কথা স্বীকার করতে চাইছে না।

উল্লেখ্য, গত জানুয়ারি মাসে সোলার প্যানেল আমদানিতে ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার মধ্য দিয়ে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে ৬ জুলাই ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের চীনা পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। গত মাসে ২০ হাজার কোটি ডলার মূল্যমানের চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে দেশটি। আগামী বছরের শুরুর দিকে এই শুল্কহার বেড়ে ২৫ শতাংশ হতে পারে। এর  বিপরীতে ৬ হাজার কোটি ডলার মূল্যমানের মার্কিন পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে চীন।

রাজায় রাজায় যুদ্ধ হলে উলুখাগড়ার প্রাণ যায় বলে যে প্রবাদ আছে, সেটি এখানে ঘটেনি। বরং রাজায় রাজায় যুদ্ধের সুফলই পেতে যাচ্ছে তৈরি পোশাক খাতে দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক বাংলাদেশ। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর এই খাতে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছিল, তা আমরা অনেক আগেই কাটিয়ে উঠেছি। এখন আমাদের করণীয় হলো তৈরি পোশাক রপ্তানির এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা এবং কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। সংস্কারমূলক কাজ কোনোভাবেই বন্ধ করা যাবে না। একই সঙ্গে তৈরি পোশাকের বাজার বাড়াতে বাণিজ্যিক কূটনীতিও জোরদার রাখতে হবে।

তবে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানির এই সুখবরের সময় একটি ‘দুঃসংবাদ’ আমাদের পীড়িত না করে পারে না। তৈরি পোশাক খাতের জন্য মজুরি বোর্ড গঠিত যে মজুরি ঘোষণা করেছে, শ্রমিকেরা তা মেনে নেননি। এ নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটেছে। সরকারি শিল্পকারখানাসহ অন্যান্য খাতের শ্রমিকদের মজুরির সঙ্গে তুলনা করলে বোর্ডঘোষিত মজুরি খুবই অপ্রতুল। শ্রমিকেরা মনে করেন, তাঁদের প্রকৃত মজুরি আরও কমে গেছে। যখন তৈরি পোশাক রপ্তানির বাজার চাঙা হয়ে উঠেছে, তখন শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দিতে সমস্যা কোথায়? শ্রমিক-অসন্তোষ রেখে কোনো খাত এগিয়ে যেতে পারে না।