দুবাইয়ে ব্যবসায়ীদের সাফল্য

বাংলাদেশিদের যেকোনো সাফল্যে আমরা দারুণ খুশি হই। আর এই সাফল্য যদি বিদেশের মাটিতে হয়, তাহলে সেই খুশির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বাংলাদেশের ফল ব্যবসায়ীদের সাফল্য আমাদের মনে তেমনই আনন্দ দিয়েছে।

রোববার প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, দুবাইয়ের শীর্ষ পর্যায়ের ফল ও সবজির বাজার আল–আভিরের ব্যবসায়ীদের ৭৫ শতাংশ বাংলাদেশি। কমপক্ষে ১৫০ জন বাংলাদেশি পাইকারি ব্যবসায়ী রয়েছেন এ বাজারে। প্রতিদিন তাঁরা লেনদেন করেন প্রায় চার কোটি দিরহাম।

বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের এই সাফল্য নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণাদায়ক। এই ফল ব্যবসায়ীদের সুবাদে আমিরাতের বাজারে বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন ৬৫ টন ফল ও সবজি রপ্তানি করা হয়। তবে আগে বাংলাদেশ থেকে অনেক বেশি পরিমাণ ফল ও শাকসবজি রপ্তানি হতো। পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় তা এখন কমে গেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ১৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের শাকসবজি রপ্তানি হয়েছিল। কিন্তু গত অর্থবছরে সেটি কমে ৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এটা খুবই হতাশাজনক একটি খবর। যেখানে রপ্তানি বাড়ার কথা, সেখানে কমে যাওয়া উদ্বেগের বিষয় বটে। এ ব্যাপারে মনে হয় সরকারের করণীয় আছে। সবজি রপ্তানিতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। এ ভর্তুকির পরিমাণ বাড়াতে হবে।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ভিসা জটিলতার কারণে অনেক ব্যবসায়ীকে দুবাই থেকে চলে যেতে হয়েছে। ভিসা পদ্ধতি সহজ হলে আরও বাংলাদেশি এখানে কাজ করার সুযোগ পেতেন। এখন সাধারণ ক্ষমায় অনেকে নতুন পাসপোর্ট পাচ্ছেন। কিন্তু ভিসা বদল কিংবা নতুন ভিসা পাওয়ার কাজটি সহজ হয়নি।

নানা কারণে ২০১২ সালের মধ্য আগস্ট থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশিদের জন্য প্রায় সব ধরনের ভিসা বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি আরব আমিরাতের সরকার বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা উন্মুক্ত করেছে। কিন্তু তা শুধু ১৯টি ক্যাটাগরিতে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার ও আরব আমিরাতের সরকারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে নতুন এই সমঝোতায় কোনোভাবেই উল্লেখ করা হয়নি যে যাঁরা সেখানে বিভিন্ন কাজে কর্মরত আছেন, তাঁরা অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তন অথবা নতুন ভিসায় আসতে পারবেন। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের হস্তক্ষেপ আশা করি।

সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সরকারের এ সমস্যার আশু সমাধান করা উচিত। কেননা, বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের জন্য। তবে শুধু দুবাই নয়, অন্যান্য দেশে গিয়েও বাংলাদেশিরা যাতে তাঁদের সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে পারেন, সে ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা করা উচিত।

বিভিন্ন দেশে যেখানে যেখানে বাংলেদেশি ব্যবসায়ীরা সাফল্য পাচ্ছেন, তার সঠিক কারণ খুঁজে বের করে সেই একই মডেল অন্য দেশেও বিস্তৃত করা যায় কি না তা নিয়ে ভাবা দরকার। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মানো দরকার, তাঁদের পাশে বাংলাদেশ সরকার রয়েছে। এই আস্থা তাঁদের মধ্যে জন্ম নিলে প্রবাসের ব্যবসায়ীরা নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে পারবেন।