ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে প্রতিবছরই কমবেশি বিতর্ক হয়ে থাকে। এবার অন্যান্য ইউনিটের পরীক্ষা মোটামুটি নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হলেও ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগটি যে ভিত্তিহীন নয়, তা খোদ উপাচার্যও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তদন্ত কমিটি ডিজিটাল জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কয়েকজনকে আটক করেছে। জালিয়াতিতে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

 কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে যে মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেন, তার প্রতিকার সম্পর্কে তিনি বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিছুই বলেনি। এ নিয়ে সাধারণ পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রতিবাদে আইন বিভাগের একজন শিক্ষার্থী অনশন শুরু করেছিলেন। গতকাল অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর দাবি, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে থাকলে অবিলম্বে ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করা হোক। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা তাঁর দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১২ অক্টোবর এবং ফল প্রকাশিত হয় ১৬ অক্টোবর। এতে ২৬.২১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এই ইউনিটে মেধাতালিকার ধারাক্রমে ১০০ জনের মধ্যে ৭৫ জন অন্য ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণই হতে পারেননি। আরও বিস্ময়কর হলো ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে যে শিক্ষার্থী পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন, তিনি অন্য ইউনিটের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিলেন। ওই শিক্ষার্থী ঘ ইউনিটে ১২০ নম্বরের মধ্যে মোট পেয়েছেন ১১৪.৩০ নম্বর। ১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত গ ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি ১২০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছেন মাত্র ৩৪.৩২ নম্বর।

এমন নয় যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে আকাশ-পাতাল ফারাক থাকে। বাংলা ও ইংরেজি ভাষা কিংবা সাধারণ জ্ঞানের মান যাচাইয়ের প্রশ্ন মোটামুটি একই থাকে। একজন শিক্ষার্থী কোনো পরীক্ষায় ১২০-এর মধ্যে ৯০ শতাংশ নম্বর পাবেন, আর কোনো পরীক্ষায় ৪০ শতাংশ পাবেন, তা অবিশ্বাস্য। পরীক্ষার ফলাফলে এই বিরাট তারতম্যের কারণ ১২ অক্টোবর ঘ ইউনিটের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা। পরীক্ষা শুরুর আগে সকাল ৯টা ১৭ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরীক্ষার ৭২টি প্রশ্ন পাওয়া যায়। হাতে লেখা ওই প্রশ্নপত্রের সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হুবহু মিলে যায়। জালিয়াত চক্র যেসব প্রশ্ন সামাজিক গণমাধ্যমে দিয়েছে, সেসবই দ্রুত পরীক্ষার্থীর একাংশের কাছে পৌঁছে যায়। সে ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষায় যাঁরা অবিশ্বাস্য ফল করেছেন, ধরে নেওয়া যায়, তাঁরা ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়েছিলেন।

ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সামাজিক অনুষদের ডিন সাদেকা হালিম বলেছেন, ফলাফলে অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে মৌখিক পরীক্ষার সময় যাচাই করা হবে এবং কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁর এই বক্তব্য যদি আমরা সঠিক ধরেও নিই, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জন্য সেটি প্রযোজ্য হবে। কিন্তু যেসব শিক্ষার্থী ডিজিটাল জালিয়াতির শিকার হয়ে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণই হতে পারলেন না, তাঁদের বঞ্চনার অবসান কী করে হবে সেটি উপাচার্য কিংবা ডিন কেউ বলেননি।

যদি তাঁরা স্বীকার করেন ঘ ইউনিটের পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতি হয়েছে, তাহলে এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে অনেকে সেই জালিয়াতির সুযোগ নিয়েছেন, আবার অনেকে তার শিকার হয়েছেন। অতএব ন্যায়বিচারের স্বার্থেই ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে ফের পরীক্ষা নেওয়া হোক। সেই সঙ্গে কীভাবে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো জালিয়াত চক্রের কাছে পৌঁছাল, এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ জড়িত আছেন কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা দরকার।