দেশে মাল্টা চাষ

রাজশাহীতে ফজলি আম ভালো হয়, নরসিংদীতে কলা ভালো হয়, বরিশালে পেয়ারা ভালো হয়—এই ধারণা আগে এতটাই গেড়ে বসেছিল যে রাজশাহীতে পেয়ারা, বরিশালে ফজলি আম কিংবা নরসিংদীতে পেয়ারা চাষ করার নিরীক্ষায়ও যেতে চাইতেন না কৃষক। এটা অবশ্যই ঠিক যে একেক ধরনের শস্য কিংবা ফলের জন্য একেক এলাকার মাটি ও পরিবেশ বিশেষ উপযোগী। কিন্তু সেই শস্য বা ফলও অন্য এলাকায় বিশেষ পরিচর্যা দিয়ে ভালোভাবে যে উৎপাদন করা যেতে পারে, তা নিয়ে আগে ভাবা হতো না।

দিন বদলেছে। মরুপ্রধান এলাকার খেজুর যে বাংলাদেশে হতে পারে, এটা ২০ বছর আগে মানুষ ভাবতেও পারেনি। কিন্তু এখন দেশের অনেক জায়গাতেই সৌদি খেজুরের চাষ হচ্ছে। একসময় মুখস্থ প্রবাদের মতো লোকে বলে দিত বাংলাদেশের মাটিতে কমলা লেবুর চাষ সম্ভব নয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সেটা সম্ভব। ড্রাগনফ্রুট ও স্ট্রবেরির মতো ফলও এখন এ দেশে সফলভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। এ ধরনের একটি নতুন আশা জাগানো দিক উন্মোচন করেছে মাল্টা। বেশির ভাগ গবেষকের কথা অনুযায়ী, এই ফলটির আদি নিবাস হলো হিমালয়ের আশপাশের এলাকায়। এখন এই ফল সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় উত্তর–পূর্ব ভারত, মিয়ানমার ও চীনের ইউনান প্রদেশে।

কিন্তু আমাদের দেশেও যে মাল্টার ভালো চাষ হতে পারে, তা সাহসী নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছেন চাষিরা। এখন বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় এর সফল চাষ চলছে। মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, পিরোজপুরে বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ হচ্ছে। বড় সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে বগুড়ায়। সেখানকার মাটি ও পরিবেশ মাল্টা চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী বলে বোঝা যাচ্ছে। এখানে উৎপাদিত মাল্টার আকৃতি বড় এবং স্বাদ যথেষ্ট মিষ্টি। স্থানীয় অনেকেই এই চাষে ঝুঁকেছেন। এতে অন্যদেরও আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে।

প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেল, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কূপতলা গ্রামের তরুণ চাষি জাহাঙ্গীর আলম ওরফে মিঠু স্থানীয় চাষিদের মধ্যে দারুণ আলোড়ন তুলেছেন। তিনি শখ করে মাল্টার গাছ লাগিয়েছিলেন। ভালো ফল পেয়ে এখন তিনি ছয় বিঘা জমিতে রসাল বারি-১ জাতের মাল্টাগাছ লাগিয়েছেন। এখন তাঁর গাছের সংখ্যা ৬৫০টি। মিঠুর মতো বহু তরুণ এতে আগ্রহী হয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। কৃষি হর্টিকালচার সেন্টার থেকে এ পর্যন্ত বারি-১ জাতের প্রায় ১০ হাজার চারা স্বল্পমূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। নিজস্ব প্রদর্শনী বাগানও আছে। প্রতিটি উপজেলার বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষের জন্য বিনা মূল্যে চারা বিতরণ করা হচ্ছে। বগুড়া সদর, সারিয়াকান্দি, গাবতলী, সোনাতলা, শাজাহানপুর, শেরপুর, নন্দীগ্রাম উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে এই মাল্টা চাষ হচ্ছে। যে মাল্টা আমরা একসময় আমদানি করতাম, সেটা খুব শিগগির রপ্তানি করব। এ বড় আশার কথা।