প্রবাসী বিনিয়োগ

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বা সরকারের উদ্যোগহীনতা নিরসনের পাশাপাশি উন্নয়ন ও জীবনমানের প্রতি সিলেট অঞ্চলের জনগণ এবং প্রবাসীদের দৃষ্টিভঙ্গিতে একটা পরিবর্তন আনার কথা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা যায়। সিলেট অঞ্চলে প্রবাসী বিনিয়োগ শীর্ষক একটি নতুন গবেষণার ফলাফল কিছুটা হলেও আমাদের অবাক করেছে।

সিলেট রাজনৈতিক দলাদলি, সংঘাত ও চাঁদাবাজি থেকে বহুলাংশে মুক্ত। স্থানীয় জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও ঐক্য বিরাজমান। সে কারণে সিলেটের প্রবাসী বিনিয়োগ পরিস্থিতি বেশি ভালো থাকার কথা। কিন্তু তা ঘটেনি। বরং ব্যাংক আমানতের ব্যবহারও দেশের অন্যান্য বিভাগের চেয়ে অনেক কম, শিল্পঋণ ৬ শতাংশও নয়। ২০১৬ সালে আসা ১ লাখ কোটি টাকার রেমিট্যান্সের মধ্যে সিলেটের অংশ ১০ ভাগের বেশি। বৃহত্তর সিলেটে ১৩ হাজার শিল্প ইউনিটে মাত্র ৬০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই চিত্র আশাব্যঞ্জক হওয়া থেকে অনেক দূরে।

শনিবার সিলেট চেম্বারের আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনের কথায় এই ইঙ্গিত স্পষ্ট যে আমাদের উন্নয়ন অনেক, কিন্তু তা টেকসই নয়। কারণ, শিল্পায়নের গতি মন্থর। সারা দেশের এই যে অবস্থা, তা পাল্টাতে সিলেটের প্রবাসী উদ্যোক্তা শ্রেণির অগ্রণী ভূমিকা রাখার কথা। সেখানের চলমান বন্ধ্যত্ব ঘোচাতে সিলেট অঞ্চলে একটা সামাজিক জাগরণের দরকার হবে। এ জন্য সিলেটের নাগরিক সমাজকে সম্পৃক্ত করে একটি উন্নয়নকৌশল নিতে হবে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফজলে এলাহী মোহাম্মদ ফয়সাল তাঁর ওই গবেষণাপত্রে কয়েকটি অপ্রচলিত বাধাও চিহ্নিত করেছেন। এটা কৌতূহলোদ্দীপক যে প্রবাসীদের পাঠানো টাকার ওপর নির্ভরশীল পোষ্যদের একটি বড় অংশ কর্মবিমুখ থাকে। অনুৎপাদনশীল খাতে খরচ করা তাদের বেজায় পছন্দ। তারাই বাজারে মাছের দাম চড়া রাখে। অলসতা, এমনকি শিক্ষা অর্জনে যুবসমাজের একাংশের বিরাট অনীহা উদ্বেগজনক। বিশ্বস্ত ব্যক্তির অভাবে প্রবাসীরা ব্যবসায়িক ঝুঁকি নিতে চান না। এই ঘাটতি বিশ্বস্ত সরকারি কর্মচারী দিয়ে কতটা পূরণীয়, তা পরিকল্পনার বিষয়। প্রবাসীরা তাঁদের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি–সংক্রান্ত সমস্যায় খুবই ভোগেন। এ ধরনের কিছু বিষয় যতটা সম্ভব অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মোকাবিলা করতে প্রশাসন বিশেষ পাইলট প্রকল্প নিতে পারে।

সিলেটের বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশের মধ্যে তেল, বনাঞ্চল, কয়লা, স্থলবন্দরের সুবিধা এবং দূষণমুক্ত পরিবেশ, পুঁজি, জমি ও কাঁচামালের (চুনাপাথর, পাথর, বালু) পর্যাপ্ততা, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য। আমরা আশা করব, ৯০ মিলিয়ন ডলারের শেরপুর বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন, সড়ক, রেল ও বিমানের অবকাঠামোতে বড় ধরনের উন্নয়ন এবং বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন, প্রবীণদের জন্য স্নেহাশ্রম গড়ে তোলাসহ যেসব সুপারিশ ফরাসউদ্দিন সমর্থিত ওই গবেষণাপত্রে করা হয়েছে, তা বাস্তবে রূপ নিলে সিলেট হতে পারে রোল মডেল।