সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রায় ৬৫ লাখ গরিব মানুষের ভাতা পাওয়া নিশ্চিত করতে সরকার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একটি ইতিবাচক চুক্তি করেছে। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণের পুরোটাই একটি প্রযুক্তিনির্ভর নেটওয়ার্ক গড়তে খরচ করা হবে। এর ফলে সুবিধাভোগীরা ঘরে বসেই আপনাআপনি প্রাপ্য অর্থ পাবেন। সরকারের এই সময়োপযোগী পদক্ষেপ ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ধারণার সঙ্গে একান্তভাবে সংগতিপূর্ণ। কিন্তু মূল প্রশ্ন হলো, প্রকৃত সুবিধাভোগী চিহ্নিত করা।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এর আগে সময়-সময়ে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, পরিত্যক্তা ও দুস্থ নারীর ভাতা এবং আর্থিকভাবে অক্ষম প্রতিবন্ধীদের ভাতাগ্রহীতা এবং তাঁদের মধ্যে অর্থ বিতরণে নানা অনিয়মের খবর ছাপা হয়েছে। এটা বুঝতে কষ্ট হয় না যে, যেখানে পুরো সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটা মূল্যবোধের অভাব চলছে, সেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বলেই তাদের সঙ্গে খণ্ডিতভাবে ন্যায়ানুগ আচরণ করা হবে, সেটা স্বাভাবিক প্রত্যাশা নয়। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পক্ষে সংগত কারণেই সত্য-মিথ্যা যাচাই করা কঠিন। তাদের পক্ষে প্রচলিত আইনকানুনের আশ্রয় নিয়ে কোনো প্রতিকার পাওয়ার চিন্তা করাও সহজ নয়।

অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এই কর্মসূচির আওতায় প্রকৃত সুবিধাভোগী চিহ্নিত করার দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ওপর। আর এখন তাঁদের একটি বড় অংশই প্রত্যক্ষভাবে দলীয় তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। কাজেই এই তালিকা তৈরির কাজটি সারা দেশে নির্মোহভাবে করা হয়েছে কি না, সেটাও প্রশ্নের বাইরে নয়। দলীয় সংকীর্ণ প্রভাবে বা ঘুষের বিনিময়ে তালিকায় নাম ঢোকানোর অভিযোগ বিরল নয়। মুক্তিযোদ্ধা এবং দুস্থ মুক্তিযোদ্ধার তালিকা নিয়ে এ পর্যন্ত যা ঘটেছে, তা বিবেচনায় নিলে এই আশঙ্কা অমূলক নয় যে বিদ্যমান ভাতা গ্রহণকারীদের সুষ্ঠু ও ত্রুটিমুক্ত তালিকা প্রণয়ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আগামী ৩৮ বছরে বিশ্বব্যাংকের আইডিএকে এই ঋণের অর্থ শোধ করতে হবে। আরও একটি বিষয় এখানে বিবেচ্য সেটা হলো, প্রকৃত সুবিধাভোগী হলেই তঁারা ভাতা পেতে পারেন না। কারণ, চাহিদার তুলনায় এর পরিমাণ কম। সুতরাং অপেক্ষাকৃত বেশি যাঁদের প্রয়োজন, নির্মোহভাবে তঁাদের বাছাই করা একটি চ্যালেঞ্জ। ইতিমধ্যে সুবিধাভোগীদের যাবতীয় তথ্য স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় আনা হয়েছে। এখন নগদ অর্থ প্রদানের বিষয়টি স্বয়ংক্রিয় করা হবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, সুবিধাভোগীদের সঠিক তালিকা হালনাগাদকরণে গুরুত্ব না দেওয়ার বিকল্প নেই।

বর্তমান সরকার এই খাতে অনেক অগ্রগতি এনেছে। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে যে আন্তর্জাতিক বিচারে দেশটি এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও তুরস্কের চেয়ে বাংলাদেশের ব্যয় কম। অবশ্য পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের ব্যয় বেশি। সুতরাং টাকার পরিমাণ বাড়াতে হবে।