জনমুখী প্রকল্পের দুর্দশা

‘ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট’ (আইএসপিপি) বর্তমান সরকারের একটি জনমুখী প্রকল্প। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় গৃহীত ৩০০ মিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। দেশের নির্দিষ্ট কয়েকটি জেলার সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারগুলোর গর্ভবতী নারী ও পাঁচ বছরের কম বয়সী সন্তানের মায়েদের এই প্রকল্পের আওতায় সহযোগিতা পাওয়ার কথা। বলা বাহুল্য, প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হলে হতদরিদ্র পরিবারগুলো উপকৃত হবে।

সমস্যা হলো এই কর্মসূচির সহযোগিতা পাওয়ার যোগ্য পরিবার ও নারীদের চিহ্নিত করে যে তালিকা তৈরি করা প্রয়োজন, সে কাজটি সম্পর্কে এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যা সত্য হলে বলতে হবে গর্হিত অপরাধ করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর ময়মনসিংহ–কুমিল্লা অঞ্চলের পাতায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক সদস্য ও তাঁদের নিয়োজিত লোকজন যত্ন প্রকল্পের সুবিধাভোগীর তালিকায় নাম যুক্ত করার বিনিময়ে টাকা আদায় করছেন। প্রথম আলোর প্রতিনিধি সরেজমিন ঘুরে এবং তালিকায় নাম লেখানোর উদ্দেশ্যে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আসা নারীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন, তালিকায় নাম যুক্ত করার বিনিময়ে মাথাপিছু ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের এক নারী ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তাঁকে টাকা না দিলে কাউকেই উপকারভোগীর ফরম দেওয়া হচ্ছে না।

চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের এক পুরুষ ইউপি সদস্য প্রথম আলোর প্রতিনিধিকে বলেছেন, উপকারভোগীদের নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য একটি ফরম পূরণ করতে হয়, সেই ‘জটিল ফরম’ পূরণ করে দিচ্ছে স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের ‘১০–২০ টাকা’ তা দিলে দোষের কিছু নয় বলে তিনি মনে করেন। প্রকৃতপক্ষে ১০–২০ টাকা নয়, মাথাপিছু ১০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।

অন্যায়ভাবে টাকাপয়সা আদায় করার এই আয়োজন উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে হয়। হতদরিদ্র নারীদের তালিকা তৈরির জন্য ‘জটিল ফরম’ তৈরি করাও দুর্বুদ্ধিপ্রসূত কাজ। বলা হয়েছে, একটা প্রাথমিক তালিকা তৈরির উদ্দেশ্যে এই কার্যক্রম চলছে; অর্থাৎ এটা গণহারে টাকা আদায়ের একটা নির্দয় কৌশল। আইএসপিপি–যত্ন প্রকল্পের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, উপকারভোগীদের তালিকা তৈরি করা হবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা জরিপের তথ্যভান্ডার থেকে। তাহলে আমাদের প্রশ্ন, প্রাথমিক তালিকা তৈরির নামে গণহারে ফরম বিক্রি বা পূরণ করার প্রয়োজন হচ্ছে কেন? অবিলম্বে এভাবে টাকা নেওয়া বন্ধ করা হোক।

হতদরিদ্র পরিবারগুলোর উপকার করাই যদি এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হয়, তাহলে এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন ছাড়া সেই উদ্দেশ্য সফল হবে না। সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর প্রতিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।