ঘরেই নারী সহিংসতার শিকার

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তরের (ইউএনওডিসি) এক গবেষণা এবং অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ ও জাতীয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ফোরামের (জেএনএনপিএফ) এক যৌথ গবেষণার ফলাফলে নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা খুবই উদ্বেগজনক।

উভয় গবেষণার ফলাফলেই বলা হয়েছে, নিজ ঘরেই নারীরা সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হয়ে থাকেন। ইউএনওডিসির গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বিশ্বে মোট ৮৭ হাজার নারীকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৮ শতাংশ খুন হয়েছেন একান্ত সঙ্গী অথবা পরিবারের সদস্যদের হাতে। অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ ও জেএনএনপিএফের গবেষণার তথ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার দুই-তৃতীয়াংশই হয় পারিবারিক পরিমণ্ডলে। আর সহিংসতার প্রায় ৯৭ শতাংশ ভুক্তভোগীর অভিযোগ আদালতে শুনানির পর্যায়ে যায় না বা গেলেও বাতিল হয়ে যায়।

তিনটি সংস্থার গবেষণায় প্রাপ্ত এসব তথ্য আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। নিজের বাড়িকে মানুষ সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় মনে করে। দিন শেষে মানুষ নিজের বাড়ি ও পরিবারের কাছে ফেরে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুখ–দুঃখ ভাগাভাগি করার মধ্যেই তৃপ্তি খুঁজে পায় মানুষ। সেই নিজের পরিবারের সদস্যদের হাতেই যদি নারীকে নির্যাতিত হতে হয়, এর চেয়ে দুঃখের বিষয় আর কী হতে পারে।

আমাদের দেশে নারীর ওপর নির্যাতনকারীর ভূমিকায় মূলত পুরুষকেই দেখা যায়। নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, দেশে বিবাহিত নারীদের ৮০ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হন এবং তাঁরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন স্বামী দ্বারা ।

দেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নানা আইন ও নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু সেসব আইন ও নীতিমালা যে খুব একটা কাজে আসছে না, তা তো বোঝাই যাচ্ছে । তবে এটা পরিষ্কার যে শুধু আইন করে নারীর ওপর নির্যাতন বন্ধ করা যাবে না। কেননা, মূল সমস্যা হচ্ছে নারীর প্রতি সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। আমাদের সমাজে নারী মানেই দুর্বল, তাঁদের বুদ্ধি নেই, তাঁরা কেবলই ভোগের বস্তু, তাঁদের কাজ শুধু রান্নাবান্না করা ও সন্তান লালনপালন করা। এই দৃষ্টিভঙ্গির যত দিন না পরিবর্তন ঘটবে, তত দিন নারীরা নির্যাতিত হতেই থাকবেন। নারীর প্রতি সমাজের এ দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। এ জন্য সরকারকে জনসচেতনতা সৃষ্টিমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। তবে আইনের প্রয়োগও করতে হবে। নারী নির্যাতনকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে ।

 অ্যাকশনএইড ও জেএনএনপিএফের গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, দেশে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা সম্পর্কিত মামলাগুলোর প্রতি পাঁচটির মধ্যে চারটিই আদালতে উত্থাপিত হতে দুই বছর সময় লেগে যায়। তারপর বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ ধরনের সমস্যা দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে।