ইসি ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ নিশ্চিত করুক

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। বাস্তবে সেটি ঘটেনি। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে একজন নির্বাচন কমিশনার বলতে বাধ্য হয়েছেন নির্বাচন ও সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না। তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনপ্রশাসন নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে থাকার কথা। তাদের নির্দেশনামতো তারা কাজ করবে। কিন্তু এটি কাজির গরু, কেতাবে থাকলেও গোয়ালে নেই। অনেক কর্মকর্তাই দলীয় কর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেও ইসি নিশ্চুপ ছিল। ফলে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যকার সংঘর্ষের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একপেশে পদক্ষেপ পরিবেশকে আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে দেশবাসীর সঙ্গে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত। বিরোধী দলের কাছ থেকে অভিযোগ এসেছে, তাদের নেতা-কর্মীরা রাস্তায় নামলেই পুলিশ গায়েবি মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করছে। তারপরও আমরা আশা হারাতে চাই না। বাকি যে সময়টুকু আছে, নির্বাচন কমিশন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্রিয়তা দেখাক। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পূর্বশর্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোট গ্রহণের সময়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ইসি প্রার্থীদের প্রচারের সুযোগ দিতে না পারুক, অন্তত ভোটারদের নিরাপত্তা দিক। তারা ভোটকেন্দ্রে এমন পরিবেশ তৈরি করুক, যাতে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীনভাবে কাজ করেন কি না, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি থাকতে হবে। ভোটকেন্দ্রে যাতে সব প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেই নিশ্চয়তাও ইসিকে দিতে হবে।

নির্বাচন কমিশন থেকে ইতিমধ্যে নির্বাচনী সরঞ্জাম কেন্দ্রে পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে। আমরা আশা করব, ইসি কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। তাদের মনে রাখতে হবে, কেন্দ্রের নিরাপত্তা শুধু নির্বাচনী সরঞ্জামের নিরাপত্তা নয়, কেন্দ্রের নিরাপত্তা হলো প্রত্যেক নাগরিক যাতে নির্ভয়ে তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দলীয় আনুগত্যের কারণে নির্বাচন কমিশন অনেক সংস্থাকে পর্যবেক্ষক তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। একইভাবে তারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা নেবে আশা করি। কোনো দলের প্রতি আনুগত্য আছে, এমন ব্যক্তি যেমন পর্যবেক্ষক হতে পারেন না, তেমনি নির্বাচনের দায়িত্বেও থাকতে পারেন না। একইভাবে যাতে সব দল ও প্রার্থীর পক্ষে পোলিং এজেন্ট থাকতে পারেন, সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে কমিশনকে। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দূরবর্তী স্থানে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর পুনরাবৃত্তি কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না। নির্বাচন কমিশন কতটা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো তার সেই নিরপেক্ষতা জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে।

নির্বাচনে যে-ই জিতুক না কেন, নির্বাচনটি যেন পরাজিত না হয়।