একাদশ সংসদ নির্বাচন

আজ একাদশ জাতীয় সংসদের ভোট গ্রহণ। সকাল আটটায় শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এবারের নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মোট ভোটার ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৩। তাঁদের মধ্যে নারী ভোটার ৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩১১ এবং পুরুষ ৫ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬২। ভোট গ্রহণের দায়িত্ব পালন করবেন ৪০ হাজার ১৮৩ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ১ লাখ ৯৫ হাজার ৩১৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং ৩ লাখ ৯০ হাজার ৬৩২ জন পোলিং কর্মকর্তা। ৩৯টি রাজনৈতিক দল থেকে ও স্বতন্ত্র মিলে মোট ১ হাজার ৮৪৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা থাকলেও একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে একটি আসনে আজ ভোট হচ্ছে না। ভোট হবে ২৯৯টি আসনে।

একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে যে পরিবেশ থাকা দরকার, তা মারাত্মকভাবে অনুপস্থিত রয়েছে এবার। তফসিল ঘোষণার পর বিভিন্ন স্থানে যেভাবে সংঘাত–সংঘর্ষ হয়েছে, বিরোধী দলের প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা-মামলার ঘটনা ঘটেছে, তাতে ভোটের পরিবেশই শুধু ব্যাহত হয়নি, নির্বাচন নিয়ে জনমনে নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছিল।

নির্বাচন একধরনের যুদ্ধ হলেও সেটি শক্তি প্রদর্শনের নয়, সেই যুদ্ধ হলো জনগণের আস্থা অর্জনের। এ ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল, প্রার্থী তথা দলীয় কর্মী–সমর্থকদের কাছ থেকে ধৈর্য ও সহনশীলতা প্রত্যাশিত। কিন্তু সরকারি দলের নেতা–কর্মীরা শুরু থেকেই ছিলেন বেপরোয়া। অন্যদিকে বিরোধী দলের কোনো কোনো নেতার ফোনালাপে যে উসকানিমূলক কথাবার্তা শোনা গেছে, তা উদ্বেগজনক। সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে তাদের কর্মীরা হতাহত এবং নির্বাচনী অফিসে হামলা হয়েছে। সরকারি দলের ওপর হামলার প্রতিটি ঘটনায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, ক্ষেত্রবিশেষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাড়াবাড়িও করেছে। কিন্তু যেখানে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন, সেখানে তাদের ভূমিকা ছিল একেবারেই বিপরীত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিরোধী দলের আক্রান্ত নেতা-কর্মীরা উল্টো গ্রেপ্তার-হয়রানির শিকার হয়েছেন। নির্বাচন কমিশন শুরু থেকে কতজন মারা গেল, সেই সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ মাপার চেষ্টা করেছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

নির্বাচনের একটি বিশ্বস্বীকৃত মান আছে এবং সেটি হলো ভয়মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা, যাতে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন এবং ফলাফলে এর প্রতিফলন ঘটে। বাংলাদেশে এর আগে যে ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে, তার কোনোটির সঙ্গে কোনোটির মিল ছিল বলে মনে হয় না। সামরিক শাসন, দলীয় সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার—যে আমলেই নির্বাচন হোক না কেন, সেগুলোর বৈশিষ্ট্য ছিল আলাদা। তবে ১৯৭৩ সালের পর দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে এবারই প্রথম নির্বাচন হচ্ছে। স্বাভাবিক কারণে এই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও তাঁদের অনুসারীদের জন্য একটি পরীক্ষা বটে। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নির্বাচন কমিশনের। অতীতের ব্যর্থতার কথা বাদ দিলেও আজ ভোটপর্বে তাদের ভূমিকার ওপরই নির্ভর করছে মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে কি না, নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হলেও অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য হবে কি না।

আজ ভোট গ্রহণের দিন যাতে পরিবেশটি সুন্দর ও সুষ্ঠু থাকে, সেই প্রত্যাশা দেশবাসীর। নির্বাচন কমিশনকে মনে রাখতে হবে, দেশের প্রায় সাড়ে ১০ কোটি ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তাঁদের ভোটাধিকার সুরক্ষা করতে না পারলে একদিন এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটিকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।