মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা লোপাট

অল্প কিছুদিন আগেই খবর বেরিয়েছিল সারা দেশে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের বসবাসের জন্য যে পাকা ভবন বানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে বছর না ঘুরতেই ফাটল দেখা দিয়েছে। ‘বীর নিবাস’ নামের একতলা ওই বাড়ি করে দেওয়া হয়েছে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে। কিন্তু সেই বাড়ির ছাদ কখন তাঁদের মাথায় ভেঙে পড়বে, সেই আতঙ্কে আছেন তাঁরা। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ করা সুযোগ-সুবিধায় স্বার্থান্বেষীদের কালো থাবার খবর একের পর এক প্রকাশিত হচ্ছে।

বীর নিবাসের ফাটলের মতো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মূল্যবোধেও যে ফাটল ধরেছে, বরিশালের মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা তছরুপ করার মধ্য দিয়ে তা আরও একবার প্রমাণিত হলো। প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, বরিশালের ৬ হাজার ৪৫৬ জন মুক্তিযোদ্ধার জন্য বরাদ্দ করা ভাতা থেকে প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকা গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে ভাতা পেতেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চের জন্য প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার নামে ব্যাংক হিসাবে ১৫ হাজার টাকা করে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু জমা হয় ১০ হাজার টাকা করে। বাকি পাঁচ হাজার টাকার কোনো হদিস নেই। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, তারা এই টাকা ছাড় করেছে। মুক্তিযোদ্ধারা বলেছেন, তাঁদের হাতে টাকা আসেনি। আর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বলছে, তারা ‘খোঁজ’ নিয়ে দেখবে। ইতিমধ্যে বরিশালে চারজন জেলা প্রশাসক বদলি হয়েছেন। তাই এই টাকা কোথায় গেল, তার উত্তর পাওয়া এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে এ ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি করা মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের সঙ্গে তামাশা করারই নামান্তর। এ বিষয়টিকে আর দশটি আর্থিক অনিয়মের মতো করে দেখার সুযোগ নেই। যে সূর্যসন্তানেরা এ দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব এনে দিয়েছেন, তঁাদের সেই ঋণ ভাতা বা কোনো বস্তুগত সম্মাননা দিয়ে শোধ করা সম্ভব নয়। তবু যাঁরা অসচ্ছল এবং জীবনসায়াহ্নে এসেছে দারিদ্র্যে ধুঁকছেন, তাঁদের জন্য কিছু করতে পারার মধ্য দিয়েই জাতি গর্ব করতে পারে। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকার যে অর্থ খরচ করে, তা জনগণের পকেট থেকে আসে। এটিকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করা যায়। সেই শ্রদ্ধার জায়গাটি অল্প কিছু মানুষের ক্ষুদ্র স্বার্থের কারণে নষ্ট হবে—সেটি কোনো কাজের কথা না। এ বিষয়টি দ্রুত আমলে নেওয়া দরকার।

মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে একের পর এক প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড চলবে, আর ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষ’ যথারীতি ‘দেখছি’, ‘তদন্ত হচ্ছে’ বলে ঘটনা আড়াল করায় সহায়তা করে যাবে, এটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।