শেরপুরের ঝুড়ি বিদেশে

অন্যান্য খাতের তুলনায় তৈরি পোশাক খাত থেকে আয় অনেক বেশি। স্বাভাবিকভাবেই সবার নজর এদিকে বেশি। পোশাকশিল্পে শ্রম ছাড়া বাকি প্রায় সবই আমদানি করতে হয়। ফলে খাতটি থেকে বিপুল পরিমাণ আয় হলেও এর বেশির ভাগই বাইরে চলে যায়। অপরদিকে হস্তজাত পণ্যের প্রায় শতভাগই দেশীয় উপাদান ও প্রযুক্তিতে হয়। এ কারণে এই খাতের রপ্তানি আয়ের পুরোটাই দেশে থেকে যায়। তারপরও এদিকে সরকারের মনোযোগ কম। এদিকে যেন সরকারের দৃষ্টি উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে।

হস্তশিল্পের মতো বিপুল সম্ভাবনায় খাতটিতে যে দৃষ্টি ফেরানো দরকার, তা আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার প্রায় দুই শ জন নারী ও অর্ধশত পুরুষ। তালপাতা, হোগলাপাতা আর কাশিয়া দিয়ে এই নারীরা হাতে বানাচ্ছেন ঝুড়ি। সে ঝুড়ি মোড়কজাত করছেন পুরুষ কর্মীরা। এই ঝুড়ি যাচ্ছে জার্মানি, সুইডেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, ইতালি, নরওয়েসহ ১৮টি দেশে। তাঁদের হাত ধরে বছরে আয় হচ্ছে ১০ কোটি টাকার বেশি। শেরপুরের এই নারীদের প্রায় সবাই স্বল্প শিক্ষিত। কেউ কেউ একেবারেই নিরক্ষর। কিন্তু তাঁদের মধ্যে যে শিল্পী মন আছে, তাকে কাজে খাটিয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান। তারা এই নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ শিখিয়েছে। হতদরিদ্র নারীরা এখন মাসে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা উপার্জন করতে পারছেন। এটি সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়ার একটি খণ্ডচিত্র।

একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে দেশের হস্তশিল্পজাত পণ্য উৎপাদনে নীরব বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে। উদ্যোক্তাদের নিজস্ব প্রচেষ্টায় প্রতিবছর লাখ লাখ ডলারের হস্তশিল্পজাত পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে। শুধু ঝুড়ি নয়। এর বাইরে শতরঞ্জি, পাটের তৈরি থলে, পাপোশ, টেরাকোটা, মোমবাতি, নকশিকাঁথা, পাখির খাঁচা, বাঁশ ও বেতের বিভিন্ন সামগ্রী, চামড়ার তৈরি মুদ্রার বাক্স (কয়েন বক্স), বেল্টসহ বিভিন্ন ধরনের হস্তজাত পণ্য রপ্তানি করছেন উদ্যোক্তারা।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যক্তিপর্যায়ে হস্তশিল্পজাত পণ্য রপ্তানি শুরু হয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রথম নিটল ক্র্যাফট ঝুড়ি রপ্তানি শুরু করে। ধীরে ধীরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় আরও অনেক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠান হস্তশিল্পজাত পণ্য রপ্তানি করছে।

এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে নিতে হলে নানা ধরনের সরকারি উদ্যোগ নেওয়া দরকার। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সরকার হস্তশিল্প প্রসারে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে। তারা শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ এ জন্য আলাদা ‘রপ্তানি নগর’ তৈরি করেছে, যেখানে বিদেশের ক্রেতারা একসঙ্গে সব পণ্য সম্পর্কে ধারণা পান। সেখান থেকেই ক্রেতারা তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী কার্যাদেশ দিয়ে যান। বাংলাদেশে এ–জাতীয় একটি উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এর মধ্য দিয়ে এই শিল্পকে এগিয়ে নেওয়া দরকার।