গাছের নীরব কান্না

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণের ৫৬টি পামগাছের গায়ে কেউ যেন পোস্টার সাঁটাতে বা ব্যানার লাগাতে না পারে, সে জন্য হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ এক অদ্ভুত পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে ওপরের দিকে প্রায় পাঁচ হাত পর্যন্ত পুঁতে দেওয়া হয়েছে লোহার পেরেক। চার ইঞ্চি লম্বা একেকটি পেরেকের প্রায় অর্ধেকটাই গেঁথে দেওয়া হয়েছে গাছে। একটি-দুটি নয়, প্রতিটি গাছে ১০০ থেকে ১৫০টি করে পেরেক ঠোকা হয়েছে। গাছগুলোর কষ বেরিয়ে পেরেকগুলোর গোড়ায় মরচে ধরে কালচে রং ধারণ করেছে। দৃশ্যটি দেখে প্রথম আলোর প্রতিবেদকের মনে হয়েছে, ‘গাছগুলো যেন কাঁদছে’। এই শিরোনামের সোমবারের প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে একটি ছোট্ট সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

প্রায় দেড় বছর ধরে পামগাছগুলোর কান্না চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরে পড়েনি। সেটা লক্ষ করেছেন ওই হাসপাতালে চিকিৎসারত এক রোগীর আত্মীয়। তিনি প্রথম আলোর প্রতিবেদকের সামনে মন্তব্য করেছেন, ‘যে হাসপাতাল মানুষের রোগ সারায়, সেই হাসপাতালেই যেন জোর করেই মারা হচ্ছে গাছগুলোকে।’

বলা হয়, পামগাছগুলো ‘শোভাবর্ধনকারী’। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের শোভা নষ্ট করার পথ বন্ধ করতেই সেগুলোর গায়ে পেরেক ঠুকেছে। উদ্দেশ্যটা অবশ্যই ভালো ছিল, কিন্তু পন্থাটা যে গাছগুলোর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, এমনকি গাছগুলোর শোভাও অনেকটাই নষ্ট করে, তা উপলব্ধি করা হয়নি। পোস্টার-ব্যানার লাগালে গাছগুলোর শোভা নষ্ট হবে, কিন্তু পেরেক ঠুকলে যে গাছগুলো মরে যেতে পারে, এই ভাবনা কেন কারও হলো না, সে এক প্রশ্ন বটে। এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক নাছির উদ্দীনের মন্তব্যই যথার্থ। তিনি বলেছেন, ‘এটা কাণ্ডজ্ঞানের বিষয়।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ‘কাণ্ডজ্ঞান’ থাকলে পামগাছগুলোর ওপর এমন অত্যাচার ঘটতে পারত না। পেরেক ঠোকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজেদের কাণ্ডজ্ঞানে না কুলোলে তারা কোনো বিশেষজ্ঞের মত জানার চেষ্টা করতে পারত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের যেকোনো শিক্ষকের সঙ্গে পরামর্শ করা যেত। প্রথম আলোর প্রতিবেদক ওই বিভাগের অধ্যাপক শেখ বখতিয়ার উদ্দীনের বক্তব্য জানতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, গাছে পেরেক ঠুকলে তার খাবার সংগ্রহে বাধা তৈরি হতে পারে, পেরেক ঠোকা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেই অংশ দিয়ে ক্ষতিকর অণুজীব ঢুকে পড়তে পারে, সব মিলিয়ে গাছের জীবনীশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, গাছটি ধীরে ধীরে মরে যেতে পারে।

বলা বাহুল্য, পেরেক ঠোকা গাছগুলোর মধ্যে তিনটি ইতিমধ্যে মরে গেছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আকতারুল ইসলামের বক্তব্য হলো, তিনি সেখানে যোগদান করার আগেই গাছগুলোতে পেরেক ঠোকা হয়েছে, তিনি এ বিষয়ে খোঁজ নেবেন, তারপর ‘উদ্যোগ’ নেবেন। আমাদের বিবেচনায় সর্বোত্তম উদ্যোগ হবে গাছগুলোকে অবিলম্বে পেরেকমুক্ত করা।