গোমতী নদীর পাড়ের মাটি কাটা

কুমিল্লার আদর্শ সদর ও বুড়িচং উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা গোমতী নদীর পাড় এবং বাঁধ থেকে অবাধে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার খবরটি উদ্বেগজনক। রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গোমতী নদীর দুই পাড় এবং বাঁধের অন্তত ৩০টি স্থান থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

মাটি কাটার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বাঁধ। অপরিকল্পিতভাবে মাটি কেটে নেওয়ার কারণে নদীর পারের মানুষ ভাঙনের আশঙ্কা করছে। মাটি কাটার ফলে উজাড় হচ্ছে গাছপালা। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। রাত-দিন মাটিবাহী ট্রাকের দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে নদীর দুই পারের বাসিন্দারা। দুই দশক ধরে প্রতিবছর শীতকালে মাটি কাটার এ উৎসব চলে আসছে। অন্যবার ট্রাক্টরে করে ইটভাটা ও বাসাবাড়িতে মাটি কেটে নেওয়া হলেও এবার ট্রাকে করে সওজ বিভাগের সড়কের কাজে মাটি নেওয়া হচ্ছে। এভাবে মাটি কাটা হচ্ছে অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বা জেলা প্রশাসন নির্বিকার। মাটি কাটা প্রতিরোধে তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

প্রায়ই দেখা যায়, সড়ক বা বাড়িঘর নির্মাণের কাজে বা ইটভাটায় ইট তৈরির কাজে অনেকে নদীর তীরের মাটি, ফসলি জমির মাটি বা পাহাড়ের মাটি কেটে নিচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায়, স্থানীয়ভাবে বা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা মাটি কেটে বিক্রি করছেন। মাটি কাটার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়া ছাড়াই মাটি কাটা চলে।

এর ফলে যেসব ক্ষতি হয়, তা পূরণ করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। নদীর তীর থেকে মাটি কাটার ফলে নদীতে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। পাহাড় থেকে মাটি কেটে নিলে পাহাড় ধসে পড়ে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি  জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়ে। কোনো ফসলি জমির মাটি কেটে নিলে কয়েক বছরের জন্য সেই জমিতে আর ফসল উৎপাদন হয় না। বছরের পর বছর ধরে এভাবে অনুমোদনহীনভাবে মাটি কাটা চলছে। অথচ তা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। এটা খুবই দুঃখজনক।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট টিলা ও পাহাড় নিধন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্যদিকে, ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে। এই দুই আইনে এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এসব আইনের কোনো প্রয়োগ নেই।

সরকার এসব আইন প্রয়োগের ব্যাপারে কঠোর না হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টির ব্যাপারেও উদ্যোগী হতে হবে।