হুমকিতে মুন্সিগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ

মুন্সিগঞ্জের শহর রক্ষা বাঁধের করুণ দশা এবং অর্থসংকটের কারণে বাঁধটির সংস্কারকাজ থেমে থাকার খবরটি বেশ উদ্বেগজনক। সোমবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, তিন কিলোমিটার এই বাঁধের নির্মাণকাজ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে শুরু হয়। শেষ হয় ২০০৯ সালে। এখন সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাঁধটির ব্লকগুলো ধসে পড়ছে। বাঁধের ওপর ইট-বালুর ব্যবসা চলছে। মালামাল ওঠানামার জন্য ব্যবসায়ীরা সেখানে রাস্তা তৈরি করেছেন। কোথাও বাঁধ খুঁড়ে কারখানার পয়োনিষ্কাশন পাইপ বসানো হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই মালবাহী নৌযান বাঁধ ঘেঁষে ভেড়ানো হচ্ছে। ফলে বাঁধ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাঁধ মেরামতের জন্য মুন্সিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ১০ কোটি টাকা চেয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠালেও মিলেছে মাত্র ১৫ লাখ টাকা। পাউবো বলছে, এই টাকা দিয়ে বাঁধটি সম্পূর্ণ সংস্কার করা যাবে না। স্থানীয় লোকজনের আশঙ্কা, আগামী বর্ষার আগে সংস্কার করা না হলে বাঁধটি পুরোপুরি ভেঙে পড়বে। এতে বর্ষার সময় মুন্সিগঞ্জ বন্যার পানিতে প্লাবিত হবে।

সাধারণত কোনো শহরকে বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। সেই বাঁধেরই যদি এমন দুর্দশা হয় তাহলে তা শহর রক্ষা করবে কী করে। শুধু মুন্সিগঞ্জের নয়, দেশের আরও বহু স্থানের শহর রক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন বাঁধের এ রকম করুণ দশা। একেকটি বাঁধ নির্মাণে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়। অথচ প্রায়ই দেখা যায়, নির্মাণের কিছুদিন না যেতেই বাঁধগুলোর বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়ছে, বন্যার সময় অনেক বাঁধ বিলীন হওয়ার খবর পাওয়া যায়। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করার পরও কীভাবে বাঁধগুলো এত দুর্বল থাকে?

সাগর ও উপকূলীয় রক্ষা বাঁধ, নদী রক্ষা বাঁধ, শহর রক্ষা বাঁধসহ সব বাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের। এসবের সংস্কার, মেরামত ইত্যাদিও পাউবোর দায়দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে বাঁধের কাজ, নদী খননসহ সব ক্ষেত্রেই অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দলবাজি, কমিশনবাজি, ঘুষ, দুর্নীতি ও বেপরোয়া লুটপাটের কারণে বাঁধগুলো টেকসইভাবে নির্মাণ করা হয় না। ফলে প্রকল্পগুলোর উপকার ও সুবিধা পায় না জনগণ।

প্রশ্ন হচ্ছে, এসব বাঁধ মজবুতভাবে নির্মাণ এবং নিয়মিত তদারকি কেন আজও নিশ্চিত করা যায়নি? জনগণের করের হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয় ও লুটপাট কি হতেই থাকবে? যেকোনো মূল্যে এই লুটপাট বন্ধ করতে হবে। বাঁধ নির্মাণ-মেরামতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দুর্নীতি-অনিয়ম-অবহেলা স্থায়ীভাবে বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যেন ভবিষ্যতে কেউ বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি-অনিয়ম করার সাহস না পান।