চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে যা ঘটেছে তা উপাচার্য ও শিক্ষক তো বটেই, সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর। গত ২৭ মার্চ প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় অন্যান্য প্রার্থী অংশ নিলেও এমদাদুল হক নামে এক প্রার্থী অংশ নিতে পারেননি বা তাঁকে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি, যিনি স্নাতকোত্তর ও স্নাতক সম্মান পরীক্ষায় রেকর্ড নম্বর পেয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক লাভ করেছেন।

পত্রিকার খবর থেকে জানা যায়, ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী পরীক্ষার আগমুহূর্তে উপাচার্যের অফিসের সামনে থেকে এমদাদকে অপহরণ করে পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত আটকে রাখেন। এই ‘স্বঘোষিত বিচারকেরা’ তাঁকে মারধর করেন এবং তাঁর কাছ থেকে অর্থ ও মুঠোফোনটি ছিনিয়ে নেন। বিষয়টি আর অভিযোগের মধ্যে সীমিত নেই। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই তাঁকে মারধর করা এবং শিবির কর্মী বলে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার ‘কৃতিত্ব’ দাবি করেছেন।

কিন্তু ছাত্রলীগের নেতারা এমদাদকে শিবির কর্মী হিসেবে দাবি করলেও ওই বিভাগের শিক্ষকেরা বলেছেন, তিনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। তিনি একজন ভালো ছাত্র। তাঁকে চরম প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে কেউ এমন করেছেন। এমদাদ ফের পরীক্ষা নেওয়ার আবেদন জানিয়ে উপাচার্যকে লিখিত চিঠি দিয়েছেন। অন্যদিকে উপাচার্য বলেছেন, পুনরায় শিক্ষক নিয়োগের সাক্ষাৎকার নেওয়া সম্ভব নয়।

উপাচার্যের অফিসের সামনে থেকে দিনদুপুরে একজন শিক্ষক পদপ্রার্থী অপহৃত হবেন, আর তিনি বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বিকার থাকবে, সভ্য দুনিয়ায় এটি হতে পারে না। যিনি প্রার্থীদের পরীক্ষার জন্য ডেকেছেন, তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বও তাঁকে নিতে হবে। এমদাদকে পুনঃপরীক্ষার সুযোগ না দেওয়া হলে সেটি তাঁর প্রতি যেমন অবিচার হবে, তেমনি অপহরণকারীদের আশকারা দেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে অন্য কোনো প্রার্থীর ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে। যে প্রার্থী প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পেয়ে বিভাগের মুখ উজ্জ্বল করেছেন, তাঁকে অপহরণ করে কি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কী বার্তা দিলেন? এমদাদের বিরুদ্ধে হঠাৎ করে ছাত্রশিবির করার অভিযোগ আনার উদ্দেশ্য যে সৎ নয়, সেটি উপাচার্য মহোদয় না বুঝলেও বিভাগের শিক্ষকেরা বুঝেছেন এবং তাঁরা এর প্রতিকারও চেয়েছেন। এমদাদ যখন প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন, যখন বিভাগে গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিলেন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে তো কোনো অভিযোগ ওঠেনি। আর কারও বিরুদ্ধে শিবির করার অভিযোগ থাকলেই কি তাঁকে অপহরণ করে মারধর করা যায়?

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি বিশ্ববিদ্যালয়কে সত্যিকার জ্ঞানার্জন ও জ্ঞান সৃষ্টির প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চায়, তাদের উচিত হবে পুনঃপরীক্ষা নিয়ে এমদাদের ওপর সৃষ্ট অবিচারের প্রতিকার করা। প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পাওয়া একজন প্রার্থীকে তারা অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করতে পারে না। অপহরণকারীদের রক্ষা করা উপাচার্যের কাজ নয়।