রাজশাহীর ৫৬১টি গাছ

রাজশাহীর কারাগার কর্তৃপক্ষের জায়গায় কারা প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ৫৬১টি গাছ কাটা শুরু হয়েছিল। রাজশাহীবাসীর প্রতিবাদের মুখে গতকাল গাছ কাটা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে অনেক বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষ বলছে, ৬৯টি গাছ কাটা হয়েছে। কিন্তু ৫০ জন শ্রমিক ছয় দিন ধরে মাত্র ৬৯টি গাছ কেটেছেন—এটা বিশ্বাস করা কঠিন।

অপূরণীয় ক্ষতির বিষয় হলো কড়ই, মেহগনি, দেবদারু, তেঁতুল এসব দেশি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। সেগুলোতে ছিল অজস্র পাখির বাসা। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশের ওই গাছগুলো পাখিদের নিরুপদ্রব বসবাসের উৎকৃষ্ট জায়গা। এলাকাবাসী ওই এলাকার নাম দিয়েছে ‘পাখি কলোনি’।

কারা প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ৫৬১টি গাছ কেটে ফেলতে হবে—এমন সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়া হয়েছিল আমরা জানি না। আমরা খবর পেয়েছি, এ জন্য বন বিভাগের অনুমোদন গ্রহণের যে বিধান আছে, তা মানা হয়নি। কারাগার কর্তৃপক্ষ ৫৬১টি গাছ বিক্রি ও কাটার জন্য নিলাম ডেকেছিল, একজন ঠিকাদার মাত্র ১৯ লাখ টাকায় এতগুলো গাছের মালিক বনে গিয়েছিলেন এবং তিনি শ্রমিক লাগিয়ে গাছ কাটা শুরু করেছিলেন।

এলাকার সাধারণ মানুষের সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানেই ধরা পড়েছে যে এতগুলো গাছ একসঙ্গে কেটে ফেলা প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য বেশ ক্ষতিকর হবে। অথচ কারাগার কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় পরিবেশের বিষয়টি ছিল বলে মনে হয় না। কিংবা তাঁরা জেনেশুনেই এই ক্ষতিকর কাজটি শুরু করেছিলেন এবং সে জন্য বন বিভাগ বা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন গ্রহণের বিধানটি এড়িয়ে গেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব যখন দিনে দিনে প্রকটতর হচ্ছে, যখন সর্বসাধারণ পর্যায়ে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষের তরফে পরিবেশের বিষয়ে এমন অসংবেদনশীলতা গ্রহণযোগ্য নয়।

আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখেছি, প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক নেতা প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। নদ-নদীর দখল ও দূষণ বন্ধ করা এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে। বনজঙ্গল উজাড় করার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বেড়েছে, গাছ লাগানোর ব্যাপারে উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সরকারি নানা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে এমন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নেয়, যেগুলো বাস্তবায়নের সময় পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব পায় না। সংরক্ষিত বনের ভেতরেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দৃষ্টান্ত রয়েছে।

কারা প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণ করার প্রয়োজনীয়তা নিশ্চয়ই রয়েছে। কিন্তু সে জন্য সাড়ে পাঁচ শতাধিক গাছ কেটে ফেলতেই হবে, অন্য কোনো বিকল্প নেই—এমন পরিবেশ বিধ্বংসী ভাবনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারা প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণের জন্য বিকল্প জায়গার ব্যবস্থা করা হোক। আর যেন একটি গাছও কাটা না হয়।