হজযাত্রীদের বাড়তি বিমানভাড়া

হজের মতো একটি পবিত্র ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে প্রতিবছর দুর্নীতি-অনিয়ম ও হজযাত্রীদের ভোগান্তির খবর পীড়াদায়ক। কিন্তু হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যাঁরা নিয়োজিত, ধর্ম মন্ত্রণালয় কিংবা হজ এজেন্সি সমিতির (হাব) কর্মকর্তাদের এসব নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। এ বছর হজযাত্রা শুরুর আগেই বিমানের টিকিট বিক্রি নিয়ে হজ এজেন্সিগুলো নানা রকম জবরদস্তি চালাচ্ছে, যার কিছু কিছু খবর সংবাদমাধ্যমেও এসেছে।

সরকার যখন প্রত্যেক হজযাত্রীর আসা-যাওয়ার বিমানভাড়া ১০ হাজার টাকা কমিয়ে ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছিল, তখন ধারণা করা গিয়েছিল, এবার অন্তত টিকিট নিয়ে কাউকে বিপত্তিতে পড়তে হবে না। চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী যাবেন। ৪ জুলাই বাংলাদেশ থেকে হজ ফ্লাইট যাত্রা শুরু করবে। এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। আর সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন বাকি ৭ হাজার ১৯৮ জন। কিন্তু কতিপয় হজ এজেন্সি হজযাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করছে।

বাংলাদেশ হজ এজেন্সি সমিতির (হাব) একজন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, প্রতিবছর হজ এজেন্সিগুলো বিমানভাড়া বাবদ যাত্রীদের কাছ থেকে এক কোটি টাকার বেশি বাড়তি অর্থ আদায় করে থাকে। গত মঙ্গলবার র‍্যাবের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে রাজধানীর পুরানা পল্টনে তিনটি হজ এজেন্সিকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন, যারা টিকিটপ্রতি ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেশি আদায় করছিল। তবে এ কথা ভাবার কারণ নেই যে ওই তিন প্রতিষ্ঠানই এই অপকর্ম করছে। এর বাইরেও যেসব এজেন্সি অসাধুতার আশ্রয় নিয়ে হজযাত্রীদের ঠকাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

উল্লেখ্য, প্রতিবছরই হজের খরচ বাড়ছে। চলতি বছর ধর্ম মন্ত্রণালয় হজযাত্রীপ্রতি প্যাকেজ-১-এর জন্য ৪ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা এবং প্যাকেজ-২-এর জন্য ৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে। গত বছর প্যাকেজ-১-এর খরচ ছিল ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯২৯ টাকা ও প্যাকেজ-২-এর ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৫৫ টাকা। এর কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে যে সৌদি সরকার বাড়িভাড়াসহ বিভিন্ন খাতে ২৪ হাজার ৯৮০ টাকা বাড়িয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী, হজযাত্রীদের অর্ধেক বিমান বাংলাদেশ ও অর্ধেক সৌদি এয়ারলাইনসে ভ্রমণ করার কথা। প্রতিটি এজেন্সিকে সর্বোচ্চ ৩০০ টিকিট দেওয়ার কথা থাকলেও সৌদি এয়ারলাইনস অনেক বেশি টিকিট সরবরাহ করেছে। এর পেছনে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনস ও এজেন্সিগুলোর মধ্যে অবৈধ লেনদেন থাকা অস্বাভাবিক নয়। একশ্রেণির এজেন্সি ‘এখনই টিকিট নিন, পরে সমস্যা হতে পারে’—এই যুক্তি দেখিয়ে বেশি দাম আদায় করছে। আবার কেউ কেউ সৌদি আরবে গিয়েও বিপদে পড়েন সুবিধামতো স্থানে বাড়িভাড়া না নেওয়ায়। বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই হজযাত্রীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে কোনো কোনো এজেন্সির লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। হজযাত্রীদের সঙ্গে এ ধরনের ছলচাতুরী গুরুতর অপরাধ। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় কী করছে?

ধর্মের বিধান অনুযায়ী, যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁদের হজব্রত পালন করা ফরজ। কিন্তু এই হজকে সামনে রেখে প্রতিবছর একটি মহল বাড়তি মুনাফা হাতিয়ে নেয়। এবারও যাতে এ রকম অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় এবং হজযাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়া বন্ধ হয়, সে জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।