খুলনায় থানায় 'গণধর্ষণ'

গণধর্ষণ এমনিতেই পৈশাচিক অপরাধ। সেই অপরাধ যদি থানার মধ্যে সংঘটিত হয় এবং ধর্ষক হিসেবে যদি পুলিশ সদস্যদের নাম উঠে আসে, তাহলে সেটি শুধু মানুষের মধ্যে ভয়ানক উদ্বেগ তৈরি করে না, এতে গোটা পুলিশ বিভাগের বদনামও হয়। 

এ ধরনের ঘটনায় মানুষের আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার যৌক্তিক কারণ আছে। আইনের শাসন বাস্তবায়নে যাঁরা নিয়োজিত, জনগণের নিরাপত্তা রক্ষাকে যাঁরা পেশা হিসেবে নিয়েছেন, সেই পুলিশ সদস্যদের নাম যদি গণধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধে জড়ায়, তাহলে মানুষের ভরসার জায়গা সংকুচিত হয়ে আসে। মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। খুলনায় সেই ধরনের আতঙ্কজাগানিয়া অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে এসেছে। 

এক নারী আদালতে অভিযোগ করেছেন, খুলনা রেলওয়ে থানার (জিআরপি) মধ্যে আটকে রেখে ওই থানার ওসি ওসমান গনি পাঠানসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য তাঁকে সারা রাত ধর্ষণ এবং শারীরিক নির্যাতন করেছেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। তবে ওসি বলেছেন, ওই নারী ফেনসিডিলসহ ধরা পড়েছেন। সাজা এড়ানোর জন্য এখন তিনি সাজানো কথা বলছেন। ওই নারীর অভিযোগ আমলে নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, আলামত সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। 

পুলিশের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ এটাই প্রথম নয়। এর আগেও এ ধরনের ঘটনায় পুলিশের নাম এসেছে। ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ইয়াসমিন নামের এক বালিকাকে ধর্ষণ ও হত্যা করেছিলেন। ওই ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল এবং সেই রায় কার্যকরও হয়েছে। 

খুলনায় যে নারী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন, তদন্তের আগে সেই অভিযোগের সত্যতার বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা আইনগত কিংবা নৈতিক বিচারে ঠিক হবে না। 

তবে বাস্তবতা হলো, পুলিশের বিরুদ্ধে করা এই ধরনের গুরুতর অভিযোগের প্রভাবমুক্ত তদন্তের আশা অনেকেই করেন না। এসব ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসন তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারে বলে জনমনে আশঙ্কা থাকে। সেই আশঙ্কা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পক্ষেই দূর করা সম্ভব। রেল পুলিশ বিভাগকে কলুষমুক্ত করতে এ ধরনের ঘটনার সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত হওয়া জরুরি। অল্প কিছুসংখ্যক সদস্যের অপেশাদারি আচরণ ও অপরাধের কারণে রেল পুলিশ বিভাগের বদনাম কাম্য হতে পারে না। তদন্তের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে অভিযুক্ত ওসি ও অন্য সদস্যদের সাময়িক বরখাস্ত করা উচিত।