পটুয়াখালীর কৃষকেরা বিপাকে

অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, লবণাক্ততা, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের আতিশয্য—ইত্যাদি কারণে গত দু–তিন দশকে দেশের কৃষিচক্রে বিরাট পরিবর্তন এসেছে। কৃষিজমির গতানুগতিক চরিত্রে পরিবর্তন ঘটেছে। এর ফলে শুধু খনার বচন আর অভিজ্ঞতালব্ধ আন্দাজের ওপর ভরসা করে এখন আর কৃষিকাজ চলে না। মাটির গুণাগুণ বিশ্লেষণ করে কোন জমিতে কোন ফসলের আবাদে কোন সার কী পরিমাণ দরকার, তা সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা ছাড়া এখন সর্বোচ্চ ফলন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আর এই পরামর্শ দেওয়া কৃষি কর্মকর্তারা যদি কৃষকের ডাকের নাগালে না থাকেন, তাহলে আবাদে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়া অনিবার্য হয়ে ওঠে।

মূলত আধুনিক পদ্ধতিতে চাষের কাজে কৃষককে সাহায্য করা ও কৃষকের নানা সমস্যার সমাধান করাই কৃষি কর্মকর্তাদের কাজ। এ ছাড়া তাঁরা চাষিকে বীজতলা, চারাগাছ তৈরি, বীজ শোধন পদ্ধতিও শেখান। খারাপ আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চাষের ক্ষতি হলে ফসল রক্ষার পথও বাতলে দেন তাঁরা। জমির মাটির চরিত্র অনুযায়ী ফসল নির্বাচন করতে গিয়ে চাষিরা সমস্যায় পড়েন। সে ক্ষেত্রেও তাঁদের সাহায্য করেন কৃষি কর্মকর্তারা। এ ছাড়া কৃষকের জন্য সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা ও উপকারিতা বোঝানো এবং সরকারি ওই সব প্রকল্পের সুবিধা পেতে কৃষককে প্রয়োজনীয় সাহায্য করাও তাঁদের দায়িত্ব।

পটুয়াখালীর কৃষি খাত এই কর্মকর্তাদের অভাবে ধুঁকছে। দেখা যাচ্ছে, কৃষি পরামর্শকদের সংকটের কারণে এই জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকেরা ঠিকমতো পরামর্শ পাচ্ছেন না। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয়ে বিসিএস (কৃষি) ক্যাডার কর্মকর্তার মঞ্জুরিকৃত ৪৬টি পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ২৬ জন। ২০টি পদই শূন্য। আর ফসল উৎপাদনে মাঠপর্যায়ে কৃষককে পরামর্শ সহায়তা, পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার ২২৪টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১৪৩ জন। ৮১টি পদই শূন্য। এর মধ্যে কলাপাড়া উপজেলার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এ উপজেলায় মাঠপর্যায়ে কৃষকের পরামর্শ ও পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে ৩ জন করে এবং পৌরসভায় ১ জন করে মোট ৩৮ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার পদ রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ২১ জন। ১৭টি পদ শূন্য রয়েছে।

কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামের বেড়িবাঁধ দীর্ঘদিন ধরে ধসে আছে। জোয়ারের পানি বেড়ে প্রায়ই তা খেতে প্রবেশ করে। চলতি আমন মৌসুমেও বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে খেত ডুবে গেছে। বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থার মধ্যে এখানে কৃষি কর্মকর্তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। ফসলের উৎপাদন নিয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কৃষকেরা। শূন্য পদগুলো পূরণ হলে এই জেলার কৃষি খাত আরও সাফল্য পাবে। পটুয়াখালীর মতো অন্য জেলাগুলোর প্রত্যন্ত গ্রামে কৃষককে আধুনিক চাষবাসের পদ্ধতি হাতে-কলমে শেখানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে কৃষি কর্মকর্তাদের শূন্য পদ দ্রুত পূরণ করা দরকার।