শুঁটকিতে অর্থনীতি গতিশীল

শুঁটকি উৎপাদন ও বিক্রি করে দেশের তিন জেলা সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোরের অর্থনীতি গতিশীল হওয়ার খবরটি নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক। 

বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, এই তিন জেলার চলনবিল এলাকায় বিলের ছোট ছোট দেশীয় মাছ থেকে তৈরি হচ্ছে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ শুঁটকি। এই অঞ্চলগুলোতে ছোট ছোট অনেক মাছ অবিক্রীত থেকে যায়। এই মাছ থেকে শুঁটকি উৎপাদনের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি বিল অঞ্চলের মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। শুঁটকি উৎপাদনকে কেন্দ্র করে এই তিন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে শত শত অস্থায়ী শুঁটকির চাতাল। পাবনায় উৎপাদিত শুঁটকি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। তবে চলনবিল এলাকায় শুঁটকি উৎপাদন, বিক্রি বা রপ্তানি করার কাজটি যে খুব মসৃণভাবে হচ্ছে, তা নয়। শুঁটকি উৎপাদনে চাতাল তৈরি, মাছ কেনা ও শ্রমিকদের মজুরি দিতে যে পুঁজির প্রয়োজন হয়, তা অনেকেরই নেই। এ ছাড়া উৎপাদিত শুঁটকি সংরক্ষণের কোনো টেকসই ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময় কম দামে শুঁটকি বিক্রি করতে বাধ্য হন উৎপাদনকারীরা। এতে লোকসান গুনতে হয় তাঁদের। 

একটা সময় ছিল, যখন শুধু কক্সবাজার ও আশপাশের এলাকায় শুঁটকি উৎপাদিত হতো। এখন কক্সবাজার ছাড়িয়ে দেশের অন্যান্য জেলাতেও ব্যাপক হারে শুঁটকি উৎপাদিত হচ্ছে। এসব শুঁটকি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এটা আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত সুখবর। তবে এ শিল্পের যেসব সমস্যা রয়েছে, তা যদি দূর করা যেত, তাহলে শুঁটকি উৎপাদন ও রপ্তানিতে যে আমরা বিশ্বের ১ নম্বর স্থানটি দখল করতে পারতাম, এতে কোনো সন্দেহ নেই। 

আমাদের দেশের শুঁটকি উৎপাদনকারীরা সবচেয়ে বেশি যে সমস্যায় পড়েন, তা হলো সংরক্ষণের সমস্যা। এ দেশে বহু আগে থেকে শুঁটকি উৎপাদিত হলেও সরকারিভাবে তা সংরক্ষণের মানসম্মত কোনো ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এ জন্য অনেক সময় শুঁটকি ভালো রাখার জন্য উৎপাদনকারীরা এতে ডাইক্লোরো ডাইফিনাইল ট্রাই-ক্লোরাইথেন (ডিডিটি) নামক রাসায়নিক মেশান, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই ডিডিটিমিশ্রিত শুঁটকি খেলে ক্যানসার, কিডনির জটিলতাসহ নানা চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। 

এ ছাড়া বিদেশে শুঁটকি রপ্তানি হলেও খাদ্যপণ্যটি রপ্তানির ব্যাপারে কোনো সরকারি নীতিমালা নেই। শুঁটকি উৎপাদন ও রপ্তানি করতে গিয়ে রপ্তানিকারকেরা নানা দুর্ভোগে পড়েন। ফলে বিদেশের বাজারে যে পরিমাণ শুঁটকির চাহিদা রয়েছে, সেই পরিমাণ শুঁটকি রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না।

আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে সরকারের যথাযথ নজর ও সহায়তা জরুরি। এ শিল্পকে আরও গতিশীল করতে সরকারকে শুঁটকি উৎপাদনকারীদের প্রশিক্ষণ ও সহজ শর্তে ঋণসুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন নিশ্চিত করতে মানসম্মত সংরক্ষণব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। শুঁটকি রপ্তানির ব্যাপারে একটি নীতিমালা তৈরি করতে হবে। সরকারি সহায়তা পেলে এ শিল্পের বিকাশ হবেই।