এবিএম মূসার প্রয়াণ

এবিএম মূসা ছিলেন আমাদের সাংবাদিক সমাজের জ্যেষ্ঠতম সদস্য ও অভিভাবক। তাঁর মৃত্যুতে গোটা সাংবাদিক সমাজই ব্যথিত ও শোকাহত। কিন্তু তাঁর প্রতি প্রথম আলো পরিবারের ঋণ আরও খানিকটা বেশি। পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ‘সময়ের প্রতিবিম্ব’ নামে একটি কলামের মাধ্যমে প্রথম আলোর পাঠকদের সঙ্গে যে নিবিড় ও গভীর আত্মীয়তা গড়ে তুলেছিলেন, আমাদের বিশ্বাস, তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়ে যাবে না। একজন জনপ্রিয় কলাম লেখক হিসেবে তো বটেই, প্রথম আলোর পরম সুহূদ হিসেবেও তিনি নানা সদুপদেশ ও পরামর্শ দিয়ে এ পত্রিকাকে সমৃদ্ধ করেছেন।

এবিএম মূসার জীবন ছিল বহুমাত্রিক ও বিপুল অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ। ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতায় নিয়োজিত থেকে তিনি দেশের সাংবাদিকতা পেশাকে যেমন সমৃদ্ধ করেছেন, তেমনই নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন সাংবাদিকতার বাইরে বহুক্ষেত্রে। কখনো জাতিসংঘ সংস্থার নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করেছেন, কখনো বা জনপ্রতিনিধি হয়ে দেশ ও জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। দেশমাতৃকার প্রতি ভালোবাসার টানেই একাত্তরে তিনি বিবিসির ও লন্ডন টাইমস-এর কলমযোদ্ধা হয়েছিলেন। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান জাতীয় প্রেসক্লাবকে তিনি করেছিলেন নিজের দ্বিতীয় বাড়ি। দলমত ও বয়সনির্বিশেষে সবাইকে আপন করে নেওয়ার তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল, তা উত্তর প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।

এবিএম মূসার পরিচয় বহুমাত্রিক। বিশাল তাঁর কর্মের পরিধি। ছাত্রজীবনে যে মুক্তচিন্তা তাঁকে প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করেছিল, পরবর্তীকালে রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও তিনি আমৃত্যু সেই চিন্তা লালন করেছেন।

তিনি চিরবিদায় নিয়েছেন, তবে তাঁর কর্ম ও আদর্শ আমাদের অনুপ্রাণিত করবে দীর্ঘ দীর্ঘকাল। কর্মের মাঝেই তিনি বেঁচে থাকবেন।