যুবলীগের টেন্ডারবাজি

ছাত্রলীগ যাঁর শুরু, তাঁর গন্তব্য যুবলীগ। ছাত্রলীগে টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির যে হাতেখড়ি হবে, যুবলীগে গিয়ে তা আরও শক্তপোক্ত হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। সে কারণেই সরকারি ভবনগুলো এখন যুবলীগের নিয়ন্ত্রণে। এসব ভবনের মাধ্যমে যত ‘উন্নয়ন’ কর্মকাণ্ড হয়, সেগুলো ‘ঠিকাদার’ যুবলীগের নেতাদের মাধ্যমে হতে হবে, নয়তো তাঁরা বসে বসে কমিশন পাবেন। যে সরকারই ক্ষমতায় থাক, সরকারি দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতাদের জন্য এই সুযোগগুলো যেন নির্ধারিত। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ‘নেতা’ হওয়ার বিষয়টি তাই এখন এক বড় লাভজনক পেশার নাম!
গত বিএনপি সরকারের আমলেও দুর্নীতির পাশাপাশি সরকারি ভবনগুলোতে ছাত্রদল ও যুবদলের যে দৌরাত্ম্য চলছিল, তা এখনো দেশবাসীর স্মৃতি থেকে মুছে যায়নি। ক্ষমতাসীনেরা বিএনপির আমলের এসব দুর্নীতির সমালোচনায় উচ্চকণ্ঠ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রোববার কুড়িল উড়ালসেতু উদ্বোধন করতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে; আমরা কি আবার অন্ধকার যুগে ফেরত যাব, না আলোর পথে থাকব। আবার কি সেই হাওয়া ভবন? আবার দুর্নীতি হবে, বিকল্প সরকার হবে।’ দেশবাসী নিশ্চয়ই অন্ধকার যুগে ফেরত যেতে চায় না, বিকল্প সরকারও চায় না। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, সরকারি ভবনগুলোতে যুবলীগের নিয়ন্ত্রণ ও টেন্ডারবাজি বজায় রাখার মাধ্যমে কি ‘আলোর পথে’ থাকা সম্ভব? প্রধানমন্ত্রী একই অনুষ্ঠানে ভোটারদের উদ্দেশে বলেছেন, সৎ লোককে বাদ দিয়ে কেউ যদি সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজকে বেছে নেয়, তাহলে বলার কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রীর এই আক্ষেপের জবাবে বলা যায়, যুবলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তো সন্ত্রাস ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হিসেবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বেছে নেওয়া হয়েছে। এই দায় তিনি এড়াবেন কীভাবে! প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুবলীগের বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ছাত্রলীগে থাকাকালীন একজন টেন্ডারবাজ ও চাঁদাবাজ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে শিক্ষা ভবনে টেন্ডারবাজি করতে গিয়ে যিনি পিটুনি খেলেন, পুলিশের হাতে আটক হলেন; তিনি পরে যুবলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক হলেন কীভাবে? যুবলীগ কিসের ভিত্তিতে তাঁকে নেতা বানাল? এ ধরনের অপকর্মের জন্য যেখানে শাস্তি পাওয়া উচিত, দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়া উচিত; সেখানে যখন কাউকে উল্টো পুরস্কৃত করা হয়, তখন যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। শরিফুল এখন শিক্ষা ভবনের টেন্ডারের প্রধান নিয়ন্ত্রক। এর বাইরে সড়ক, মৎস্য, বিদ্যুৎ ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি ভবন ও সিটি করপোরেশনগুলোর অন্য যেসব সরকারি ভবন আছে, সেগুলোর সবই যুবলীগের কোনো না কোনো নেতার নিয়ন্ত্রণে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যত ‘উন্নয়ন কর্মকাণ্ড’ ঘটে, যুবলীগের নেতাদের ততই পোয়াবারো।
গত বিএনপি সরকারের আমলের দুর্নীতি নিয়ে সরকার ও সরকারি দল নিশ্চয়ই প্রচার-প্রচারণা চালাবে, কিন্তু নিজ দলের লোকজনকে এভাবে দুর্নীতি করার সুযোগ দিয়ে এসব প্রচারণা কোনো সুফল দেবে না। সরকারের বোধোদয় কবে হবে?