হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি অব্যাহত রাখা অযৌক্তিক

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশব্যাপী টানা অবরোধের ৬৭ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা সংবাদ সম্মেলন করে যা বললেন, তাতে নতুন কিছুই নেই। জনগণের ওপর অবরোধ-হরতালের মতো চাপিয়ে দেওয়া কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে তিনি পুরোপুরি হতাশ করেছেন।
খালেদা জিয়া তাঁর বক্তব্যে এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করেছেন যে তিনি ও তাঁর দল সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনগণকে মাঠে নামাতে ব্যর্থ হয়েছে। জনগণ অবরোধ ও হরতালের মতো কর্মসূচি চায় না এবং নাশকতা ও পেট্রলবোমার ভয়ের মধ্যেও জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা যে এখন এ ধরনের কর্মসূচি পুরোপুরি উপেক্ষা করতে শুরু করেছে—এই সত্যকেও তিনি স্বীকার করেননি। অথচ এই অভিযোগ জোরালো হয়েছে যে আন্দোলন সফল করার জন্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট নাশকতার আশ্রয় নিয়েছে। আর পেট্রলবোমা ও ককটেলের ঘায়ে বহু সাধারণ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে।
খালেদা জিয়া এই সহিংসতার দায় যতই অস্বীকার বা সরকারকে এ জন্য দায়ী করুন না কেন, তাঁর দল ও জোটের ডাকা কর্মসূচির সময় ঘটা এসব ঘটনার দায় মূলত তঁাদেরই নিতে হবে। সাধারণ মানুষের প্রাণহানি, সম্পদ ও দেশের অর্থনীতির চরম ক্ষতি, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস করা ছাড়া এই টানা অবরোধ ও হরতালের কর্মসূচি যে কোনো সাফল্য আনতে পারেনি এই সত্যকে স্বীকার করতেই হবে। ফলে প্রত্যাশিত ছিল যে খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ ধরনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেবেন এবং জনসম্পৃক্ত গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য নতুন ঘোষণা দেবেন।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে বর্তমান সরকার বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-নিপীড়ন চালাচ্ছে। আমরা সরকারের এই আচরণ বন্ধ করার দাবি জানাই। কিন্তু বিএনপিকেও মানতে হবে যে এ ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করেই আন্দোলনের কৌশল নিতে হয়। সেটা না করে টানা অবরোধ বা হরতালের মতো কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে বিএনপির নেত্রী দায়িত্বহীনতারই পরিচয় দিলেন।