সুন্দরবনে বারবার আগুন

নানান বিপদে আক্রান্ত সুন্দরবনের নতুন উপদ্রব হয়ে উঠেছে ‘আগুন’। গত এক মাসেই অন্তত চারবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। মূলত পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জেই এ ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে। একটি ঘটনায় বন বিভাগ স্থানীয় ছয়জনের নামে মামলাও করেছে। বন বিভাগকে অবশ্যই আগুন লাগার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ও কারণগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।
অভিযোগ রয়েছে, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে মাছ শিকারের জন্য উপযোগী এলাকা তৈরির জন্য আগুন লাগানো হচ্ছে। এক মাসেই চারবার আগুন লাগার ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয়, এর পেছনে স্বার্থান্বেষী মহলের হাত রয়েছে। এসব দুর্ঘটনা নয়। বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার সুবিধার জন্য নিচু এলাকা মাছ চাষের উপযোগী করা এ আগুনের একটা হেতু হতে পারে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের যে নেতাদের নাম আগুনের অভিযোগ সূত্রে এসেছে, সে বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। সুন্দরবনে আগুনের ঘটনায় এই প্রথম মামলা হলো। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ১৪ বছর ধরে বন বিভাগ সুন্দরবনের এই আগুন লাগার ঘটনার কোনো সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারেনি।
সুন্দরবন বহুভাবেই বিপন্ন অবস্থায় আছে এবং কমপক্ষে দুটি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প বড় আকারের হুমকি সৃষ্টি করেছে। সরকারের বন বিনাশী প্রকল্প, বারবার তেল ও কয়লাবাহী জাহাজডুবি, বনের ভেতর দিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল এবং বন্য প্রাণী বাণিজ্যের মতো বিষয় সুন্দরবনের ক্ষতি করে আসছে। বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে পরিবেশবাদী ও সচেতন নাগরিকেরা বারবার সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত বৈশিষ্ট্য রক্ষায় সরকারের উদাসীনতা এমনকি সচেতন ভুল পদক্ষেপের সমালোচনা করে আসছেন। বারবার আগুন লাগার ঘটনা সার্বিকভাবে সুন্দরবনের অরক্ষিত দশার দিকেই ইঙ্গিত করছে।
সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ও প্রাণবৈচিত্র্য বাংলাদেশের অমূল্য জৈব সম্পদ। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে এটা দক্ষিণাঞ্চলের পরীক্ষিত রক্ষাকবচ। সুন্দরবনকে বাঁচাতেই হবে। সুন্দরবনের আগুন–সন্ত্রাসীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।