ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু ধেয়ে আসছে—এমন আগাম খবরের ব্যাপক প্রচার সত্ত্বেও প্রাণহানি এড়ানো যায়নি। সরকারি হিসাবে ২৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাওয়ায় লক্ষাধিক ঘরবাড়ি তছনছ হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে অধিকাংশ উপকূলীয় জেলার বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, মাছের ঘের ইত্যাদি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রোয়ানুর পূর্বাভাসের সময় সম্ভাব্য উপদ্রুত এলাকাগুলোর লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার কাজটি কঠিন। দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার একদম পূর্ব মুহূর্তে কেউ কেউ আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটে গেছেন। প্রাণহানির সংখ্যা যত বেশি হতে পারত, ততটা হয়নি বটে, কিন্তু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। উপকূলীয় ১০-১২টি জেলার প্রায় এক কোটি মানুষ রোয়ানু-কবলিত হয়েছেন, তাঁদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে পুনর্বাসনের উদ্যোগ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নেওয়া দরকার। যাঁদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, তাঁদের, বিশুদ্ধ পানির উৎস নষ্ট হয়েছে, খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে, তাদের আশু ত্রাণসাহায্যের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, সংগঠনকেও এখন দুর্গত মানুষের সাহায্যার্থে এগিয়ে যেতে হবে।
রোয়ানুর আঘাতের ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে, তার নেতিবাচক প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে। বিশেষ করে যঁারা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন ও যাঁদের জীবন–জীবিকার নানা উৎস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাৎক্ষণিক ত্রাণসাহায্যের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত বা পুনর্নির্মাণের জন্য টিন ও অন্যান্য সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে হবে। ফসলহানিসহ যাঁদের জীবিকা ধ্বংস বা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁদের আর্থিক অনুদান কিংবা সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা বিবেচনা করা যেতে পারে।
আরেকটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা দরকার: বেড়িবাঁধগুলো ভেঙেছে কেন? জলোচ্ছ্বাস থেকে জমি ও জনপদ রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই তো বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলোই যদি জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যায়, তাহলে নির্মাণের কী অর্থ থাকে? বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হোক।