মার্গারিতা মামুনকে লইয়া খুশি হইলে দোষ কী!

এবারের অলিম্পিকে রিদমিক জিমন্যাস্টিকসে সোনা জেতা মার্গারিতা মামুনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কটা কী, তা আমাদের জানা। তাঁর বাবা আবদুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশের ছেলে। বাংলাদেশের বাবা আর রাশিয়ান মায়ের কন্যা মার্গারিতার জেতা সোনার পদকটি রাশিয়ার ঝুলিতেই গেছে। কিন্তু তাঁর এই পদক জেতা নিয়ে আমরা বড় এক বিপদে পড়ে গেছি। আমাদের মনে দ্বিধা, মার্গারিতা মামুনকে লইয়া আমরা কী করিব! তাঁর পদক জয়ে আমরা খুশি বা গর্বিত হইব, নাকি দীর্ঘশ্বাস ছাড়িব! অথবা বিষয়টিতে মাতামাতি না করিয়া মৌন ও গম্ভীর থাকিব!

আর কিছু না হোক, জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ বড় দেশ, দুনিয়ায় আট নম্বর। কিন্তু আমাদের ঝুলিতে কোনো অলিম্পিক পদক নেই। এসব নিয়ে এবার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে লেখালেখিও হয়েছে। কেন বাংলাদেশ একটিও অলিম্পিক পদক পায়নি, সেই বিশ্লেষণ দেখেছি ইয়াহু নিউজে। ইউএসএ টুডে অলিম্পিকে কোনো পদক না পাওয়া একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে নিয়ে আলাদা প্রতিবেদন করেছে। সেখানে লিখেছে, বাহরাইন, বার্বাডোজ, বারমুডা ও বুরুন্ডির মতো দেশও একটি করে পদক পেয়েছে, কিন্তু বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ বাংলাদেশ কোনো অলিম্পিক পদক জেতেনি। বাংলাদেশের সঙ্গে এই তালিকায় থাকা আর দুটি দেশের নাম হচ্ছে কঙ্গো আর মিয়ানমার।
এসব নিয়ে আমাদের মনে দুঃখ-বেদনা, হতাশা, দীর্ঘশ্বাস বা মনের গভীরে ক্ষোভও থাকতে পারে। কিন্তু মার্গারিতাকে নিয়ে যদি আমরা একটু খুশি হই, মনের ভেতরে যদি গর্ব জেগে ওঠে, তবে ক্ষতি কী! ওবামার বাবা কেনিয়ায় জন্মেছেন, আর ওবামা প্রেসিডেন্ট হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের। কেনিয়াবাসীর মনে তাতে খুশির ভাব জাগলে তা কি দোষের? খেলার ব্যাপারে তো বিষয়টি আরও খোলামেলা। এক দেশের খেলোয়াড় আরেক দেশে ক্লাবে গিয়ে খেলছেন। আমাদের সাকিব বা মুস্তাফিজ বাইরে গিয়ে যে দলের পক্ষে খেলেন, সেই দল জিতলে তো আমাদের খুশিই লাগে।
মার্গারিতার বাবা রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ছেলে। মাঝেমধ্যে মার্গারিতা বাংলাদেশে আসতেন। এমনকি বাংলাদেশে হয়ে জিমন্যাস্টে অংশও নিতে চেয়েছিলেন বলে আমরা জেনেছি। সেটা হয়নি। কেন হয়নি, তা নিয়ে এখন হয়তো অনেকের মনে ক্ষোভ-দুঃখ জাগতে পারে। আফসোসও হতে পারে। তবে বাংলাদেশের হয়ে জিমন্যাস্টে অংশ নেওয়া শুরু করলে তিনি এই ফল পেতেন কি না বা সেখানে যে সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে, তা আমরা দিতে পারতাম কি না, তাও তো মাথায় রাখতে হবে!
রাশিয়ার হয়ে সোনার পদক জেতা মেয়েটি ‘বেঙ্গল টাইগার’ হিসেবেই পরিচিতি পাচ্ছেন, এটাই-বা আমাদের জন্য কম কী! রয়টার্স খবর দিয়েছে, মার্গারিতা নিজেই তাঁর পদক জয়কে ‘দুই দেশের জয়’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের কারও জন্য তো তিনি বড় অনুপ্রেরণা হয়ে কাজ করতে পারেন। এমনকি একজনও যদি মার্গারিতা থেকে অনুপ্রেরণা পায়, সেটা ফেলনা?
খুশি, আনন্দ, উচ্ছ্বাস বা গর্বের অনুভূতি মানুষের ভেতর থেকে আসে। যাঁরা মার্গারিতার বাংলাদেশ যোগসূত্র মিলিয়ে খুশি হয়েছেন, যাঁদের মনে গর্বের বোধ হয়েছে, তা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই হয়েছে। আসুন, তাঁদের আমরা খুশি হতে দিই, উচ্ছ্বসিত হতে দিই, গর্বিত হতে দিই!
আর যাঁরা সচেতনভাবে ঠিক করেছেন, বিষয়টিতে খুশি হবেন না বা গর্ব অনুভব করবেন না, তাঁরা নাহয় সচেতনভাবে তা-ই করুন! যাঁরা খুশি হয়েছেন, যাঁদের মনে গর্ব হচ্ছে, অন্তত তাঁদের দোষ ধরতে যাবেন না! প্লিজ!
এ কে এম জাকারিয়া: সাংবাদিক

আরও পড়ুন: