একজন ভ্যানচালকের আত্মত্যাগ

ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস। অফিসে কাজের চাপ। দ্রুত কাজ শেষ করলাম। বিভাগীয় প্রধানকে অনুরোধ করে একটু আগেই অফিস থেকে বের হলাম। 

রাস্তায় এসে চোখ ছানাবড়া। বাসে ওঠার কোনো জো নেই। এমনিতেই বাসের সংখ্যা কম। হয়তো বেশি ভাড়া পাওয়ার আশায় দূরের যাত্রী পরিবহনের অপেক্ষা করছে। আর যাও কিছু আসছে, তাও তাদের চিরাচরিত লোকাল চেহারা পাল্টে গেটলক সিটিং চেহারা ধারণ করেছে। রিকশাও তেমন নেই। অথচ রাস্তায় অসংখ্য মানুষ। সবার মধ্যেই ঘরে ফেরার তারা। কোনো একটি বাস আসামাত্রই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে। হঠাৎ একটি খালি ভ্যানের দেখা মিলল। ভাই কত দূর যাবেন? জিজ্ঞেস করতেই ভ্যানচালক বললেন, ‘না যামু না, মালামাল আনা-নেওয়া করতেছি। সামনে গিয়া মালামাল নিমু।’ আমাদের নিয়ে যান, বলতেই উত্তর দিলেন, ‘সামনে পর্যন্ত গেলে ওঠেন।’ অন্তত কিছুটা পথ হলেও আগানো যাবে—এই ভেবে ভ্যানে ওঠে পরলাম। দেখাদেখি আরও কয়েকজন ওঠে পরল। সহযাত্রীর গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে ভ্যানের পাশে পা দুলিয়ে বসে রইলাম। রাস্তা অনেকটা ফাঁকা পেয়ে ভ্যানও দ্রুত চলতে লাগল। অবশেষে তাঁর ‘সামনে’ পর্যন্ত ভ্যান পৌঁছাল। ‘এইবার নামেন, গাড়ি ঘুরামু।’ অগত্যা নেমে পরলাম। নেমে সবাই তাঁকে ভাড়া দিতে চাইলাম। কিন্তু তাঁর নির্লিপ্ত জবাব, ‘ভাড়া লাগব না, আমি তো এমনিতেই আইতাম।’ কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে রইলাম। টাকা পকেটে রেখে দিয়ে আবার ব্যস্ত হয়ে পরলাম যানবাহনের সন্ধানে। কারণ, রাস্তা এখনো বাকি। বাসায় পৌঁছতে হবে।