সাহসীদের মধ্যেই বেঁচে থাকবেন তালহা

মানুষের প্রতি সহমর্মিতার দৃষ্টান্ত হিসেবে কোনো ব্যক্তির অনন্য সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ফারাজ হোসেন সাহসিকতা’ পুরস্কার দেওয়া হয়। ফারাজ আইয়াজ হোসেন স্মরণে এই পুরস্কার প্রবর্তন করেছে পেপসিকো গ্লোবাল। পেপসিকো ২০ বছর পুরস্কারটি প্রদান করবে। পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা স্বীকৃতি সনদের পাশাপাশি পান ১০ হাজার মার্কিন ডলার। অসীম সাহসিকতার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৬ সালে মিরাজ সরদার এবং ২০১৭ সালে খন্দকার আবু তালহা (মরণোত্তর) পুরস্কারটি পেয়েছেন।

আবু তালহা
আবু তালহা

তালহার ভূমিকা ছিল সুতার মতো। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, পাড়াপড়শি—সবাইকে যেন একই সুতায় গেঁথে রেখেছিলেন তিনি। এখন তাই ক্ষণে ক্ষণে খন্দকার আবু তালহার অনুপস্থিতি অনুভব করেন এই মানুষেরা।

তালহার বাবা আবু রিয়াজ বললেন, ‘সে স্মৃতিই বাঁচিয়ে রেখেছে আমাদের। কিন্তু ওর মা, ছোট দুই বোন এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি। তালহাকে হারানোর শোক সয়ে উঠতে পারেনি।’

তিনি নিজেও কি পেরেছেন? এই এটুকু বলতে গিয়ে কণ্ঠটা তাঁর ভারী হয়ে উঠল। কথা থামিয়ে নীরব থাকলেন কিছুটা সময়। বললেন, ‘আমি তো বুকে পাথর বেঁধেছি।’

ফিরে গেলেন গত বছরের ৮ অক্টোবর, ‘তখন ভোর সাড়ে ছয়টা হবে। আশুলিয়ায় ওর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাবে। রাজধানীর টিকাটুলীর বাসা থেকে তালহা বিদায় নিল। ওকে আদর দিয়ে বিদায় দিলাম। তারপর আবার শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ “আব্বু আব্বু” ডাক। নিচে নেমে দেখি একটা ছেলে দৌড়ে আসছে। কাছে এলে বুঝলাম আমার ছেলে তালহা। রক্তাক্ত। পাশের এক হাসপাতালে নেওয়া হলো, সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।’ এই হাসপাতালে সেদিনই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করলেন তালহা।

খন্দকার আবু তালহা সেদিন মুখ ফিরিয়ে নিতে পারতেন। পায়ের দিকে তাকিয়ে হেঁটে চলে যেতে পারতেন গন্তব্যে। যেমনটি করেছিলেন আশপাশের অন্য দশজন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যাঁর রক্তে, তিনি তো বিপদের আঁচ করে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন না। ছিনতাইকারীর হাত থেকে প্রতিবেশীকে রক্ষা করতে ছুটে গেলেন আবু তালহা। ধরেও ফেলেন এক ছিনতাইকারীকে। কিন্তু তাকে ছাড়িয়ে নিতে অপর ছিনতাইকারী ছুটে এল। ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাতে রক্তাক্ত করল তালহাকে।

এমন ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য আবু তালহাকে ‘ফারাজ হোসেন সাহসিকতা পুরস্কার ২০১৭’ দেওয়া হয়। ২০১৬ সাল থেকে কোনো ব্যক্তির অনন্য সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত বিচারকমণ্ডলী প্রস্তাবিত তরুণ বা তরুণীদের মধ্য থেকে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করেন।

আবু তালহার স্মৃতি ধরে রাখতে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সঙ্গে মিলে তাঁর নামে একটা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করার কাজ চলছে। এই ফাউন্ডেশন থেকে সাংবাদিকদের পুরস্কৃত করা হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞানে পড়াশোনা করতেন তালহা। প্রথম চার সেমিস্টার শেষও করেছিলেন।

বাবা আবু রিয়াজ বললেন, ‘ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না। তার নামে একটি পুরস্কার প্রবর্তন করে সাহসী মানুষদের পুরস্কৃত করতে চাই। এই সাহসীদের মধ্যেই তো ছেলেকে খুঁজে পাব।’