বিচিত্র গুহার কথা

কোনোটা প্রাকৃতিক, কোনোটা কৃত্রিম। বৈশিষ্ট্যে আবার প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র। জেনে নেওয়া যাক বিশ্বের এমন পাঁচটি বিচিত্র গুহা সম্পর্কে।

ম্যামথের খুব ছোট অংশই দেখার সুযোগ হয়েছে সাধারণ মানুষের। এখানে রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষের আনাগোনা বছরজুড়েই থাকে। ২০১৭ সালে প্রায় ৬ লাখ পর্যটক এই গুহা ভ্রমণ করেছে। ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ম্যামথ ভ্রমণের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই যেতে হয়।
ম্যামথের খুব ছোট অংশই দেখার সুযোগ হয়েছে সাধারণ মানুষের। এখানে রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষের আনাগোনা বছরজুড়েই থাকে। ২০১৭ সালে প্রায় ৬ লাখ পর্যটক এই গুহা ভ্রমণ করেছে। ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ম্যামথ ভ্রমণের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই যেতে হয়।

ম্যামথ মানেই অতি বৃহৎ

‘অতি বৃহৎ, অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং অদ্ভুত একটি জায়গা।’ প্রায় ১৮০ বছর আগে ম্যামথ গুহা সম্পর্কে স্টিফেন বিশপের (১৮২১-১৮৫৭) মন্তব্য ছিল এমনই। সে জামানায় স্টিফেন বিশপ ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের গুহা অনুসন্ধানী ও ম্যামথ গুহার একজন গাইড। গুহার অভ্যন্তরে ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি যেমন বিস্ময় প্রকাশ করে গেছেন, সে গা ছমছম বিস্ময়ের এতটুকু কমেনি আজও। ম্যামথ। ঠিক ধরেছেন, সে-ই অতিকায় রোমশ হাতির কথাই বলা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে পারে, প্রায় ১০ হাজার বছর আগে বরফযুগের ম্যামথ নামের যে প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছিল, তার সঙ্গে পাথুরে গুহার সম্পর্ক কী! সম্পর্ক, বিশালতায়। ম্যামথের মতো বিশালতা বোঝাতেই এ নামকরণ হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যে অবস্থান চুনাপাথরের এই গুহার। ভূতত্ত্ববিদদের ধারণা, প্রায় ৩৫ কোটি বছর আগে এই বিস্ময়কর গুহা গড়ে ওঠার শুরু। তবে নিজস্ব আকৃতি পেতে শুরু করে ১ কোটি বছর আগে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস ম্যামথ গুহা দেখভাল করে থাকে। গুহা নিয়ে একটি ওয়েবসাইটও রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, গুহাটির দৈর্ঘ্য এখন দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৪৩ কিলোমিটার। যা এখনো ক্রমবর্ধমান। তবে ম্যামথের খুব ছোট অংশই দেখার সুযোগ হয়েছে সাধারণ মানুষের। এখানে রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষের আনাগোনা বছরজুড়েই থাকে। ২০১৭ সালে প্রায় ৬ লাখ পর্যটক এই গুহা ভ্রমণ করেছে। ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ম্যামথ ভ্রমণের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই যেতে হয়।

প্রথম খোঁজ মেলে গুহার। ২০০৭ সালের শুরুর দিকে নোহচ নাচ চিচ নামের ডুবন্ত গুহার সন্ধান মেলে। যা স্যাক অ্যাক্টুনের সঙ্গে সংযুক্ত। এভাবে বাড়ছে গুহার দৈর্ঘ্য। উন্মোচন হচ্ছে অজানা ইতিহাস
প্রথম খোঁজ মেলে গুহার। ২০০৭ সালের শুরুর দিকে নোহচ নাচ চিচ নামের ডুবন্ত গুহার সন্ধান মেলে। যা স্যাক অ্যাক্টুনের সঙ্গে সংযুক্ত। এভাবে বাড়ছে গুহার দৈর্ঘ্য। উন্মোচন হচ্ছে অজানা ইতিহাস

মেক্সিকোর ডুবো দুনিয়া

ডুবে ডুবে কম গবেষণা হয়নি মেক্সিকোর স্যাক আক্টুন নিয়ে। কেনইবা হবে না, বিশেষজ্ঞদের কাছে এই গুহা প্রণালি তো তথ্যের আধার। তাঁদের অনেকে মনে করেন, মেক্সিকোর কুইন্টানা রু রাজ্যের তুলুম এলাকার এ গুহাগুচ্ছেই মিলবে প্রাচীন মায়া সভ্যতার অনেক রহস্যের সমাধান।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই মেক্সিকোর জাতীয় নৃবিজ্ঞান ও ইতিহাস ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা নতুন আবিষ্কার নিয়ে হাজির হলেন। গ্রান অকুইফারো মায়া প্রকল্পের (জিএএম) অধীনে চালানো অনুসন্ধানে তাঁরা পেলেন বিস্তৃত গুহার সন্ধান। গবেষকেরা দেখালেন আন্তুন হো, অক্স বেল হে, কুইন্টানা রু–এমন গুহাগুচ্ছ মিলে স্যাক অ্যাকটুন গুহা প্রণালির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৪৭ কিলোমিটার। যার মধ্যে পানির তলদেশে আছে প্রায় ২৬০ কিলোমিটার। এই গুহাকেই দীর্ঘতম ডুবন্ত গুহা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপের ক্যারিবীয় উপকূলে অবস্থান স্যাক আক্টুনের। চুনাপাথর গঠিত ইউকাটান উপদ্বীপটি গালফ অব মেক্সিকো ও ক্যারিবীয় সাগরকে পৃথক করেছে। অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল ইকাটান উপদ্বীপের উত্তর ও পশ্চিমে যুক্ত তুলুম এলাকায়। ১৯৮৭ সালের ২৬ নভেম্বর প্রথম খোঁজ মেলে গুহার। ২০০৭ সালের শুরুর দিকে নোহচ নাচ চিচ নামের ডুবন্ত গুহার সন্ধান মেলে। যা স্যাক অ্যাক্টুনের সঙ্গে সংযুক্ত। এভাবে বাড়ছে গুহার দৈর্ঘ্য। উন্মোচন হচ্ছে অজানা ইতিহাস।

জিপসামের গোলকধাঁধা

পাথুরে গুহায় মার্বেল, চুনাপাথর, জিপসাম এমন বিভিন্ন খনিজ উপাদানের মিশ্রণ থাকে। তবে ইউক্রেনের অপটিমিস্টিক গুহার কথা আলাদা। ২৬৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গুহাটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জিপসাম গুহা। এই খনিজ পদার্থের আস্তরণের ফাঁকা অংশে নিয়েই তৈরি হয়েছে গুহাটি। ১৯৬৬ সালে অপটিমিস্টিক গুহার সন্ধান মেলে। ধীরে ধীরে মানুষের ভ্রমণের সুযোগ তৈরি হয়। এখন ঘটা করেই সেখানে পর্যটকেরা ঘুরতে যান। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ম মেনে চলতে হয়, নিতে হয় আগাম অনুমতি। গুহার ৭টি প্রবেশ পথ রয়েছে পর্যটকদের জন্য। ইউক্রেনিয়ান, রুশ, পোলিশ, ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় গাইড আছে পর্যটকদের সুবিধার জন্য। বছরজুড়ে গুহার ভেতরের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

পারমাণবিক পরিখা যখন গুহা

১৯৬৬ সালের কথা। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে টক্কর দিতে অতি গোপনে পরমাণুসমৃদ্ধ করার কাজ শুরু করে চীন। সে প্রক্রিয়ায় চীনের সামরিক বাহিনী দেশটির চংকিং শহরের ফুলিং জেলার জিয়ানজি পর্বতে একটি বাংকার খনন শুরু করে। এ যেনতেন বাংকার নয়। দৈর্ঘ্যে প্রায় ২০ কিলোমিটার। যেখানে ছিল ৮১৬টি পারমাণবিক স্থাপনা। বিশাল এই ভূগর্ভস্থ প্রকল্পে প্রায় ৬০ হাজার সৈন্য কাজ করেছিলেন। পারমাণবিক কাজের জন্য রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদন ও মজুত করার কাজ চলেছে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত। এরপর চীনের সামরিক নীতিতে পরিবর্তন এলে বন্ধ করে দেওয়া হয় প্রকল্পটি। ২০১০ সালে চীনা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। কিন্তু তখনো বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ছিল। ২০১৬ সালে সে নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হয়। এই বাংকারটি এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কৃত্রিম গুহা।

বরফের পেটে অন্য দুনিয়া

লংজোকুল আয়তনে আইসল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হিমবাহ। প্রায় ৯৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ হিমবাহের একটি অংশে গড়ে তোলা হয়েছে বরফের গুহা। ইনটু দ্য গ্লেসিয়ার নামে আইসল্যান্ডের কয়েকজন ব্যবসায়ীর একটি প্রতিষ্ঠান এ বরফের গুহা তৈরি করেছে। গুহাটি তৈরি করা মোটেও সহজ ব্যাপার ছিল না। পদে পদে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে কারিগরদের। কতটা কঠিন ছিল তা হয়তো নির্মাণ–সময়ই বলে দেবে। প্রায় ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যের কৃত্রিম গুহা তৈরিতে সময় লেগেছে চার বছর। গত বছরের গোড়ার দিকে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। গুহায় তীক্ষ্ণ ফলার মতো ঝুলে থাকা বরফ পেরিয়ে সামনে এগোতে এগোতে যেমন রোমাঞ্চের স্বাদ নেওয়া যায়, তেমনি সুযোগ আছে অনুষ্ঠান আয়োজনের। এখন পর্যন্ত এটিই বিশ্বের বড় কৃত্রিম বরফ গুহা।

ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস, ডেইলি মেইল, সিএনএন এবং ফক্স নিউজ