সংখ্যায় সংখ্যায় সাক্ষাৎকার

আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী। ছবি: খালেদ সরকার
আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী। ছবি: খালেদ সরকার

আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের জন্য প্রথম সোনার পদকজয়ী আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরীর কাছে গণিত হলো খেলার মতো। প্রশিক্ষণ, চর্চা—তারপর মাঠে নামা। গণিতের সঙ্গে যার সখ্য, তার সাক্ষাৎকারও নেওয়া হলো সংখ্যায় সংখ্যায়।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ: মো. সাইফুল্লাহ

১ শব্দে পদক জয়ের অনুভূতি

শান্তি!

গণিত অলিম্পিয়াডের মজার ২ ঘটনা...

গণিত ক্যাম্পের শেষ দিন রাতের বেলা আমরা ঘুমাই না। সারা রাত গল্প করি, সিনেমা দেখি। ২০১৭ সালে ঢাকায় ক্যাম্পের শেষ রাতে ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস অ্যান্ড হোয়ার টু ফাইন্ড দেম দেখেছিলাম। সেটা খুব মজার ছিল।

আরেকটা মজার ঘটনা ঘটেছে এবারের আইএমওতে। আইএমওর পরীক্ষার আধঘণ্টা আগে সাধারণত আমরা হলে ঢুকি। এবার এক ঘণ্টা আগেই ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, প্রথম আধঘণ্টা আমরা যা খুশি করতে পারি। ফিনল্যান্ডের একটা দল হঠাৎ দুই সারির মাঝখানে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল। তারপর ওরা পতাকা নিয়ে মিছিলের মতো করল। নিজ নিজ দেশের পতাকা নিয়ে আমরাও তাতে যোগ দিয়েছিলাম। কিছুক্ষণের জন্য পরীক্ষা, গণিত, নম্বর, পদক, টেনশন...সব মাথা থেকে দূর হয়ে গিয়েছিল।

গণিত অলিম্পিয়াড থেকে ৩ প্রাপ্তি

  • বাংলাদেশের জন্য একটা কিছু করতে পারা। আশা করি, এই স্বর্ণপদক সারা দেশের ওপরই একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
  • পড়ানোর আনন্দ। চিটাগং ম্যাথ সার্কেলের শুরুতে আমি ক্লাস করেছি, পরে ক্লাস করিয়েছি। ক্লাস নিতে নিতে পড়ানোর মজা পেয়েছি।
  • গণিত অলিম্পিয়াড আমাকে অসাধারণ কিছু বন্ধু দিয়েছে।

আইএমওতে পাওয়া ভিনদেশি ৪ বন্ধু...

  • যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাক ব্রোমেন। ২০১৭ সালের আইএমওতে ছাদে বসে আমরা অনেকক্ষণ গল্প করেছিলাম।
  • রোমানিয়ায় আমাদের গাইড, ভ্লাড লুকাচি। এবার আইএমওতে প্রথমে গিয়ে আমাদের একটু মন খারাপ লাগছিল। হোটেলটা অন্ধকার। মনে হচ্ছিল আয়োজনটা আগের চেয়ে একটু ম্লান। কিন্তু যখন গাইড লুকাচির সঙ্গে পরিচয় হলো, তখন সবার মন ভালো হয়ে গেল। ওর বন্ধুদের সঙ্গে আমাদেরও বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
  • গতবার আইএমওতে ব্রাজিলে আমাদের গাইড ছিল লেচিসিয়া আমানসিও। খুব দ্রুতই সে আমাদের সবার বড় বোনের মতো হয়ে গেল। ফুটবলে লেচিসিয়া একাই আমাদের ছয়জনকে হারিয়ে দিয়েছিল।
  • গুয়াতেমালার কারিনা। আমরা ইশারায় সিনেমার নাম বলার খেলা খেলেছিলাম। আমি যেহেতু একটু একটু স্প্যানিশ জানি, ওকে সিনেমার নাম বোঝাতে সুবিধা হয়েছে।

গণিতকে ভয় না পাওয়ার ৫ পরামর্শ...

  • ভয় পাওয়ার কিছু নেই। গণিত তো বাঘ নয়। এটা তোমাকে খেয়ে ফেলবে না।
  • যেকোনো গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য ধাপে ধাপে এগোতে হবে। তাড়াহুড়া করে সমাধানের চেষ্টা করলে ভুল হবে।
  • গণিত অলিম্পিয়াডে অনেক সময় প্রশ্ন দেখে শিক্ষার্থীরা ঘাবড়ে যায়। ঘাবড়ানোর কিছু নেই। যদি কোনো ‘কেস’ দিয়ে বলা হয়, এটি সব সংখ্যার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, তাহলে প্রথমে ছোট ছোট সংখ্যা বসিয়ে দেখতে হবে।
  • প্রচুর চর্চা করতে হবে।
  • সবশেষে আমার পরামর্শ—গণিতের ভয় দূর করার জন্য বিভিন্ন গাণিতিক ধাঁধা সমাধান করে দেখতে পারো। অঙ্কের মধ্যেও অনেক মজা আছে। এই মজাটা একবার পেয়ে গেলে আর ভয় থাকবে না।

আইএমওর ৬ প্রশ্ন যখন হাতে এল...

দুই দিনে ছয়টা প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। প্রথম দিনের প্রশ্ন দেখে আমার মুখে হাসি এসে গিয়েছিল। ৩ নম্বরে ছিল ‘কম্বিন্যাটোরিকস’-এর অঙ্ক, আমার সবচেয়ে প্রিয়। দ্বিতীয় দিন ঘটল একটা মজার ঘটনা। রাফায়েল নামে গ্রিক এক ছেলে জানতে চাইল, ‘তোমার দেশ এখন পর্যন্ত কয়টা স্বর্ণপদক পেয়েছে?’ আমি বললাম, ‘একটাও না।’ ও বলল, ‘আমি নিশ্চিত, আজকের পর থেকে এই প্রশ্নের উত্তরে তোমরা অন্তত “একটা” বলতে পারবে।’

পরীক্ষার আগের শেষ ৭ দিন...

আইএমওর পরীক্ষা অন্য কোনো পরীক্ষার মতো নয়। শেষ মুহূর্তে ‘রিভাইস’ দেওয়ার কিছু নেই। সুতরাং আমাদের সময়টা মোটামুটি মজায় কেটেছে। এবার যেমন আমরা সিনেমা হলে ডেডপুল টু দেখতে গিয়েছিলাম। রোমানিয়ায় রওনা হওয়ার আগে ঢাকায় কিছুদিন খালার বাসায় ছিলাম। তখন ফ্যান্টাসি কিংডমে বেড়াতে গিয়েছি।

স্কুলের ৮ বিষয়ের মধ্যে যেটাতে আমি সবচেয়ে দুর্বল ছিলাম...

বাংলায় নম্বর তোলা একটু কঠিন মনে হয়।

৯ শব্দে আমার স্বপ্ন...

এখনো সেভাবে ভাবিনি। আপাতত একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই।

১০ বছর পর নিজেকে যেখানে দেখতে চাই...

যা-ই করি না কেন, মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ যেন থাকে।