যেখানে ক্রিকেটের হৃৎস্পন্দন

ক্রিকেটারদের সই করা ব্যাটের দেখা মিলল জাদুঘরে
ক্রিকেটারদের সই করা ব্যাটের দেখা মিলল জাদুঘরে

সংযুক্ত আরব আমিরাতে এবারের এশিয়া কাপ হবে, শোনার পরই মনের ভেতর অন্য রকম এক ভালো লাগা কাজ করছিল। ভালো লাগা এ কারণে, মাঠে থেকে বাংলাদেশ দলকে সমর্থন তো দেওয়া যাবেই। পাশাপাশি বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সদর দপ্তরে ঢুঁ মারা যাবে। দেখা যাবে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট জাদুঘর ‘শ্যাম ভাটিয়া ক্রিকেট মিউজিয়াম’।

অনেক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ)’ একটি দল রওনা হয় মরুর দেশে। পাঁচ ঘণ্টার বিমানভ্রমণ শেষে মাঝরাতে দুবাইয়ের মাটিতে পা রাখতেই আমাদের অভ্যর্থনা জানাল তপ্ত হাওয়া! জানিয়ে দিল, কতটা গরমে খেলবে বাংলাদেশ। দুবাই স্পোর্টস সিটির দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামটা দেখতে যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি ভীষণ গোছানো। খেলা দেখতে যাওয়া দর্শকদের জন্য আদর্শ স্টেডিয়াম যাকে বলে। এত পরিষ্কার, এত পরিচ্ছন্ন। পানীয়, প্রশিক্ষিত নিরাপত্তাকর্মীর সার্বক্ষণিক সজাগ দৃষ্টি—এককথায় অসাধারণ!

স্মারকে সাকিব আল হাসান–বন্দনা
স্মারকে সাকিব আল হাসান–বন্দনা

সমস্যা একটাই, দিনের বেলায় কাঠফাটা রোদ। এই গরম সব আনন্দ-মজা যেন বিষিয়ে তোলে! তবে সে গরমই তুচ্ছ হয়ে যায় যখন বাংলাদেশ খেলতে নেমেছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে তো আমরা ধন্দেই পড়ে গিয়েছিলাম, এটি দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম, নাকি মিরপুরের শেরেবাংলা! হাজারো বাংলাদেশি প্রবাসীর উপস্থিতিতে গ্যালারির রং হয়ে যায় লাল-সবুজ। এশিয়া কাপের আরেক ভেন্যু আবুধাবি শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়াম, যেটির অবস্থান মরুভূমির একেবারে মাঝে। দুবাইয়ের মতো সব ব্যবস্থা আছে এ স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ দলকে সমর্থন দিতে আবুধাবিতেও এসেছেন হাজারো প্রবাসী। 

রথ দেখা আর কলা বেচা যাকে বলে, খেলা দেখার পাশাপাশি আমরা গিয়েছি আইসিসি ক্রিকেট একাডেমিতে। দেখা করেছি একাডেমির তত্ত্বাবধানে থাকা এমিরেটস ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ডেভিড ইস্টের সঙ্গে। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে আইসিসি ক্রিকেট একাডেমিতে, যেখানে স্থানীয় কিংবা বিদেশি অনেক দল আসে বিশেষ প্রস্তুতি নিতে।

ক্রিকেটারদের ব্যবহৃত টাই
ক্রিকেটারদের ব্যবহৃত টাই

যাঁদের ক্রিকেট স্মারক সংগ্রহে বিশেষ ঝোঁক আছে, তাঁদের একবার হলেও ঢুঁ মারা উচিত ‘শ্যাম ভাটিয়া ক্রিকেট মিউজিয়ামে’। দুবাইয়ের শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় শিল্পপতি শ্যাম ভাটিয়া ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করেছেন ক্রিকেটের বিরাট সংগ্রহশালা। বিশ্বের বিখ্যাত সব খেলোয়াড়ের ব্যবহৃত স্মারক, ক্রিকেটের ওপর লেখা বইয়ের সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা, দেয়ালে দেয়ালে টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর ক্রিকেট ইতিহাস—কী নেই!  ব্রাডম্যান থেকে শুরু করে আমাদের সাকিব আল হাসান, বিশ্বসেরা কারও অটোগ্রাফ—বাদ নেই তাঁর সংগ্রহে! যত দেখি তত অবাক আর মুগ্ধ হই। আমাদের সৌভাগ্য যে স্বয়ং শ্যাম ভাটিয়া নিজে সব ঘুরিয়ে দেখালেন। ফিরে আসার সময় সংগ্রহশালার জন্য শুভেচ্ছা স্মারক উপহার দিই আমাদের পক্ষ থেকেও।

আরব–আমিরাত ভ্রমণে বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কয়েকজন সদস্য। ছবি: সংগৃহীত
আরব–আমিরাত ভ্রমণে বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কয়েকজন সদস্য। ছবি: সংগৃহীত

দুবাই যাওয়ার প্রায় এক মাস আগে আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভিড রিচার্ডসনকে তাঁদের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শনে আমাদের আগ্রহের কথা জানাই। তাঁরা আমাদের আগ্রহকে সম্মান জানিয়ে আমন্ত্রণ জানান। সেটিরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর আইসিসির প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে দেখা করি। সাক্ষাৎপর্ব শেষে পুরো আইসিসি কার্যালয় ঘুরিয়ে দেখান রিচার্ডসন নিজেই। এই সুযোগে আমাদের দেখা হয় তাদের দুর্নীতি দমন ইউনিট, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ এবং আম্পায়ার্স ডিসিশন পর্যবেক্ষণ বিভাগ। 

মরুতে প্রাণ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু আরব আমিরাতই যেন এখন ক্রিকেটের ‘হার্ট’! ক্রিকেট কীভাবে চলবে, সব যে ঠিক হয় এ দেশে অবস্থিত আইসিসির কার্যালয়ে। তবে আরও এক কারণে এই সফরটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে, বাংলাদেশ যে দুর্দান্ত খেলেছে মরুর বুকে! 

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ)।