কপালে কাপ রেখে কনকের গিনেস রেকর্ড

>কপালের ঠিক মধ্যখানে ৬০০ কাগজের কাপ রেখে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছেন ফেনী পলিটেকনিকের ছাত্র কনক কর্মকার। গত বছরের ২২ নভেম্বর রেকর্ডটি গড়লেও স্বীকৃতি সনদ হাতে পেয়েছেন সম্প্রতি। যদিও ইতিমধ্যে আরেকজন কনকের রেকর্ডটি ভেঙে ফেলেছেন। তবে কনক থেমে থাকার ছেলে নন, ফুটবলসহ নানা বিষয়ে কসরতে তাঁর স্বপ্নের ডানা তিনি মেলেই চলেছেন।
কপালে কাগজের কাপ রেখে নৈপুণ্য দেখাচ্ছেন কনক কর্মকার
কপালে কাগজের কাপ রেখে নৈপুণ্য দেখাচ্ছেন কনক কর্মকার

কনক কর্মকারের সঙ্গে কথা বলব, তার আগে তাঁর সম্পর্কে কিছুটা তো জানা দরকার। তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে ঢুঁ মেরেছিলাম সেই ‘কিছুটা’ জানার জন্যই। পুরো টাইমলাইনে যা পাওয়া গেল, তা শুধুই ফুটবল! কেবল ফুটবলের নানা কসরতের ভিডিওতে যেন সয়লাব তাঁর ফেসবুক টাইমলাইন। ফুটবলে কী অসাধারণ নৈপুণ্যই না দেখিয়েছেন সেসব ভিডিওতে। কনকের বয়স ১৯ বছর। কিন্তু তাঁর দক্ষতা আর অর্জনের পাল্লা বেশ ভারী। কেননা এই বয়সেই গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছেন তিনি। ফুটবল নিয়ে নানা কসরত করতে করতেই ভারসাম্য রাখার একটা রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন কনক। অবশ্য সেই ভারসাম্য রাখার রেকর্ডটি ফুটবলে নয়, কাগজের কাপ কপালে রাখার দক্ষতার।

কাপ কপালে রাখার রেকর্ড গড়ে কনক ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন ইতালির রোকো মেরকুরিওকে। কনক বলেন, ‘রেকর্ডটি আমার আগে ছিল মেরকুরিওর দখলে, আমি ভেঙেছিলাম, তিনি আবার আমার রেকর্ড ভেঙেছেন। তিনি শুরুতে ৫০০ কাপ কপালে রেখে রেকর্ড গড়েছিলেন। আমি সেই রেকর্ড ভেঙেছি ৬০০ কাপ কপালে রেখে।’

১ এপ্রিল পর্যন্ত গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাদের ওয়েবসাইটে কনকের বিশ্বরেকর্ডের তথ্যই রেখেছিল। তবে ২ এপ্রিল থেকে ‘মোস্ট কাপস ব্যালেন্স অন দ্য ফরহেড’ বিভাগে কনকের নাম সরিয়ে ইতালির রোকো মেরকুরিওকে দেখাচ্ছে রেকর্ডের মালিক হিসেবে। তিনি ৭০০ কাপ কপালে রেখে রেকর্ডটি পুনরুদ্ধার করেছেন বলে জানিয়েছে গিনেস কর্তৃপক্ষ।

সে তথ্য প্রকাশের আগেই ১ এপ্রিল মুঠোফোনে যখন কথা হচ্ছিল কনকের সঙ্গে, তখন তিনি ফেনীতে। ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পাওয়ার টেকনোলজি বিষয়ে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র কনক, সেখানেই থাকেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি কুমিল্লার লাকসামে হলেও নোয়াখালীতেই স্থায়ীভাবে থাকছে তাঁর পরিবার। বাবা বাবুল কর্মকার প্রবাসী, মা শিল্পী কর্মকার গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে কনক বড়। পড়াশোনা আর পরিবার নিয়ে আলাপের ফাঁকেই কনক জানালেন সেই স্বপ্নপূরণের গল্প, ‘রেকর্ড করার জন্য প্রথমে আমি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের কর্তৃপক্ষের কাছে ই-মেইল করি। আড়াই মাস পর তারা মেইলের জবাব দেয়। কীভাবে ভিডিও করে তাদের পাঠাতে হবে, সেসবের নির্দেশনা দেওয়া ছিল সেই মেইলে। পরে আমি ভিডিও পাঠালে মাসখানেক পরে তারা জানায়, আমি আগের রেকর্ডটি ভাঙতে পেরেছি।’

মজার ব্যাপার হচ্ছে, গিনেস ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষ মাত্র ১০ সেকেন্ডের ভিডিও চাইলেও ভিডিওতে কনক ভারসাম্য রেখে দেখিয়েছিলেন পুরো ৬৬ সেকেন্ড। অবশ্য প্রায় এক মিনিটের ভিডিওর পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে অনুশীলন চলেছে প্রায় এক মাস ধরে। গিনেস বুক কর্তৃপক্ষকে ভিডিও পাঠানোর পর ২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে কনকের রেকর্ডটি। কনক বলেন, ‘প্রায় ছয় মাস অপেক্ষার পর সনদ হাতে পেয়েছি ৩ ফেব্রুয়ারি।’

স্বপ্নপূরণ আর স্বপ্ন হাতছাড়া হওয়া—দুটো অভিজ্ঞতাই হয়েছে কনকের। এখন তবে নতুন স্বপ্ন কী? কনক যে সামান্যতেই তুষ্ট হওয়ার মানুষ নন, বোঝা গেল তাঁর উত্তরে, ‘বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গিনেস রেকর্ডধারী ব্যক্তি হওয়ার ইচ্ছা আমার। এ জন্য আবারও বেশ কিছু বিষয়ের ওপর রেকর্ড গড়তে চাই। সে লক্ষ্য নিয়েই কাজও করা শুরু করেছি আমি।’