মো. ইউনুস বাদল যা কখনো বলবেন না

>

খবর: ১০ বছর আগেও মো. ইউনুছ বাদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল গাড়িচোর চক্রের নেতা হিসেবে। ২০০৭ সালে পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছিলেন। এর ঠিক তিন বছর পর থেকে তিনি জনতা ব্যাংক থেকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার ঋণ ও ঋণসুবিধা। এখন তিনি বড় শিল্পপতি, এ্যাননটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ২২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক। (সূত্র: প্রথম আলো, ১১ মার্চ ২০১৮)

১০ বছর আগের কথা। ২০০৭ সালের ১৭ মে। দিনটি ছিল অন্যান্য দিনের মতোই উচ্ছ্বল ও প্রাণবন্ত। পাউরুটির ওপর পুরু করে মাখন লাগিয়ে যখন কামড় দিতে যাব, তখনই আমার বাড়িতে আচমকা হানা দিল আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী এক বাহিনী। তারা বলল, আমি নাকি গাড়িচোর চক্রের নেতা, তাই আমাকে গ্রেপ্তার করতে এসেছে! শুনে আমার হাত থেকে খসে পড়ল মাখন মাখানো নরম পাউরুটি। আমি চিৎকার দিয়ে বলতে চাইলাম, ‘না না, এ হতে পারে না! নিশ্চয়ই আপনাদের কোথাও না-কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি একজন সম্মানিত ব্যবসায়ী।’ কিন্তু ওরা আমার কোনো কথাই সেদিন শোনেনি।

সেদিন আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। কারণ, আমার ভয় হচ্ছিল, কারও তদবির কাজে আসছিল না। আমাকে গ্রেপ্তারের তথ্য গণমাধ্যমে না দেওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের ঘুষ সেধেছিলাম, তাতেও কাজ হয়নি। পরদিন ঠিকই কয়েকটি পত্রিকায় গাড়িচোর চক্রের প্রধান হোতা হিসেবে আমার নাম এসে পড়ে। তবু দমে যাইনি আমি। বরং দৃঢ় কণ্ঠে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আর না। এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। এমন উপায় খুঁজে বের করতে হবে যা গুগলও জানে না।

আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে, জেল থেকে বের হয়েই আমার নজর পড়েছিল একটি বিশেষ সাইনবোর্ডের ওপর, যেখানে নীল-সাদা রঙে লেখা ছিল ‘জনতা ব্যাংক’। সেদিন থেকে আমার দিন বদলের গল্পের শুরু। এর ঠিক তিন বছর পর থেকে আমি আবির্ভূত হই জনতা ব্যাংকের অন্যতম বড় ঋণগ্রাহক হিসেবে। ব্যাংকটি সব নিয়মনীতি ভঙ্গ করেই আমাকে উদারহস্তে অর্থ দিয়ে গেছে। সেই টাকায় আমি এখন বড় শিল্পপতি, ২২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক।

সবচেয়ে বড় ঋণগ্রাহক হয়ে আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। কারণ, আমার ভয় হচ্ছিল। ভাবছিলাম, আমি তো জানি না, এত বড় একটা সম্মানের প্রতি কীভাবে সুবিচার করব। আমি খুব সাধারণ এক মানুষ ছিলাম। সমাজের কল্যাণে অনেক কাজ করেছি। কিন্তু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কখনোই সেভাবে যুক্ত ছিলাম না। হঠাৎ করেই আমার কাছে বড় বড় সাংবাদিকেরা আসতে শুরু করলেন, তাঁরা কঠিন কঠিন সব প্রশ্ন করতে লাগলেন। যেমন: এত বড় ঋণ আমি কীভাবে শোধ করব, আদৌ শোধ করতে পারব কি না? তাঁদের প্রশ্ন শুনে অবাক হতাম। ভাবতাম, এরা বলছেটা কী! এরা কি জানে না সব ঋণ শোধ করতে নেই, কিছু ঋণ চিরন্তন! তা ছাড়া এসব ঋণ দিয়েছে ব্যাংক, আমি এর সম্পর্কে কতটুকুই বা জানি! একই সঙ্গে অভিভূত এবং বিপন্ন বোধ করতাম। অতএব বিশাল ঋণগ্রহীতা হওয়ার পর প্রথম কয়েক বছর আমি আনন্দের পাশাপাশি ভয়টাও বহন করেছি। বিভিন্ন লোকজনের কাছে গিয়েছি, তদবির করেছি। তখন নিরাপত্তা নিয়েও আমার ভেতর খানিকটা শঙ্কা কাজ করত। ধীরে ধীরে এই ভয় কাটিয়ে উঠে আমি ব্যাপারটা উপভোগ করতে শুরু করেছি। এ জন্য জনতা ব্যাংকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

অতএব প্রিয় জনগণ, আপনারা কখনো ধৈর্যহারা হবেন না। সামনে বাধা এলে বুকে সাহস রাখবেন। কারণ, আপনাদের পাশে, মানে জনতার পাশে আছে জনতা ব্যাংক। যদিও এখন এই ব্যাংকের অবস্থা খারাপ, তারা ঋণ উদ্ধারের জন্য আমার পেছনে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে, তবু আমি মনে করি, এখনো আমার মতো আরও ১০-২০টা শিল্পপতি বানানোর ক্ষমতা এই ব্যাংকের আছে। তাই মাছির মতো লেগে থাকুন, সাফল্য একদিন ধরা দেবেই। সেদিন হয়তো দেখা যাবে, আপনাদের মধ্য থেকে আমার চেয়েও বড় ঋণ নিয়ে কেউ একজন রস+আলোতে বক্তৃতা পাঠাবেন। তাই আশা হারাবেন না।

সবশেষে তরুণদের উদ্দেশে আমি বলব, নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে গাড়ি নিয়ে নাড়াচাড়া করো। নিজের গাড়ি, অন্যের গাড়ি—যেখানে যে গাড়ি পাও, সেটা নিয়েই নাড়াচাড়া করো। দেখবে, গাড়ি নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে একদিন তোমরা পৌঁছে যাবে সাফল্যের শিখরে। সে জন্য তোমাদের পাশে সব সময় পাবে জনতা ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক। এই সুযোগগুলো কাজে লাগিয়েই একদিন তোমরা সমাজকে বদলে দিতে পারবে। সবার জন্য শুভকামনা।