জান নিয়ে টানাটানি

মোহিত বাইরে থেকে এসেছে মাত্র, মনটা বেশ ফুরফুরে। আজ এমন একজনের সঙ্গে দেখা হয়েছে যে যাকে দেখার জন্য কয়েক বছর ধরে অপেক্ষা করছিল সে! মোহিতের ফুরফুরে মেজাজ দেখে দিশার সন্দেহ হয়। রোজ অফিস থেকে ফেরার পর মোহিতের মেজাজ তো এমন ফুরফুরে থাকে না। হলোটা কী আজ?

মোহিত মোবাইলটা বিছানার ওপর ছুড়ে ফেলে ওয়াশরুমে গেল। ঠিক সে সময় ‘টিং’ করে একটা আওয়াজ। স্ক্রিনে ভেসে উঠল একটা মেসেজ। দেখব না দেখব না করেও উঁকি দিল দিশা। উঁকি দিয়েই তার মাথায় আগুন। মেসেজটা এ রকম—We were having great time! Hope we’ll meet again soon!

দিশার মাথার আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল যখন দেখল মেসেজ প্রেরকের নম্বরটি Jaan দিয়ে সেভ করা। মুহূর্তেই মাথাটা ধরে গেল দিশার। মোহিতের ফুরফুরে মেজাজের তাহলে এই রহস্য? তলেতলে এই করছে সে?

পুরো ঘর মাথায় তুলে চিৎকার করে উঠল দিশা। ওয়াশরুম থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এল মোহিত।

‘কে এই জান?’ চিৎকারে করে জানতে চাইল দিশা, ‘কবে থেকে চলছে এসব?’

স্ত্রীর একের পর এক প্রশ্নে কাবু হয়ে গেল মোহিত। ফোনটা দিশার হাত থেকে একপ্রকার কেড়ে নিয়ে মেসেজটা দেখতেই মুখে হাসি ফুটল তার। হাসি থামিয়ে বলল, ‘আছে একজন। টপ সিক্রেট। এসব বাদ দাও, এক কাপ চা দাও।’

‘চা? আমি দেব চা? কেন, তোমার ওই জানের কাছে চা-পানি চাও না কেন?’ আবারও চিৎকার করে উঠল দিশা।

‘নম্বর তো আছেই, ফোন করে দেখো না। আমি বললে কি বিশ্বাস করবে?’ বলেই ফোনে জানের নম্বরে কল দিল মোহিত। রিং হতেই ফোনটা ধরিয়ে দিল দিশার কানে।

খানিকক্ষণের নীরবতা। ওপাশ থেকে কেউ একজন ফোন ধরল। দিশা স্পষ্ট শুনল, কণ্ঠটা পুরুষের।

‘হ্যালো, মোহিত? হ্যালো...’ এভাবে কিছুক্ষণ হ্যালো হ্যালো বলে গেল ওপাশ থেকে।

কিছুটা চুপসে গেল দিশা। ফোনটা কেটে দিল খট করে। দিশার চুপসে যাওয়া মুখটা দেখে হা হা করে হেসে উঠল মোহিত। হাসি থামিয়ে গম্ভীর মুখে বলল, ‘শুনলে আমার জানের কণ্ঠ?’

‘ভনিতা রাখো। কে এই জান?’ মুখ গোমড়া করে জানতে চাইল দিশা।

মোহিত হাসতে হাসতে বলল, ‘আরে, এটা আমার স্কুলবন্ধু জামান। ওই যে লন্ডনে থাকে। দুই দিন হলো এসেছে। আজ দেখা হয়েছিল। তাড়াহুড়ো করে নম্বর সেভ করতে গিয়ে M-টা বাদ পড়ে গেছে, তাই Jaman বদলে Jaan নামে সেভ হয়ে গেছে!’

দিশা বলল, ‘গ্রিন-টি দেব?’